মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর গায়েবানা জানাজাকে ঘিরে চকরিয়া ও পেকুয়ায় জামায়াত–শিবিরের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ সময় পুলিশের একটি ভ্যান, স্বাস্থ্য প্রধানের ব্যবহৃত সরকারি গাড়িসহ একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় গুলি।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই উপজেলায় আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি। এর মধ্যে পেকুয়া থানার ওসি মো. ওমর হায়দার, একই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য্যসহ ওই থানার ১২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। চকরিয়া থানার একাধিক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন ইট–পাটকেলের আঘাতে।
গতকাল বিকাল ৪টার দিকে চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গা, নামার চিরিঙ্গা এবং পেকুয়ার বারবাকিয়া বাজারে এই ঘটনা ঘটে। চকরিয়ায় হামলার সময় নিহত ব্যক্তির নাম ফোরকানুল ইসলাম (৫০)। তিনি চকরিয়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল বারী পাড়ার আবুল ফজলের ছেলে। তিনি পেশায় একজন চা দোকানি।
ঘটনার পর কঙবাজার জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড ইউনিট জামায়াতের সেক্রেটারি বলে দাবি করা হয়েছে। কঙবাজার শহরে কর্মরত সাংবাদিকদের কাছে এই দাবি করেন কঙবাজার শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের নামার চিরিঙ্গার একটি মসজিদে গায়েবানা জানাজা শেষে চকরিয়া পৌরশহরে জামায়াত–শিবিরের একদল নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে বের হয়। এ সময় পুলিশ ভ্যান, স্বাস্থ্য বিভাগের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন একজন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো গুলি চালানো হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এদিকে দুই স্থানের ঘটনায় আহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল বিকাল ৪টার সময় চকরিয়া সরকারি হাইস্কুল মাঠে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে মর্মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জামায়াত–শিবিরের কর্মীদের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়। এতে বেশ কিছু লোক সমাগম হয়। এর আগে স্থানীয় চিরিঙ্গা বায়তুশ শরফ মসজিদে কিছু লোক গায়েবানা জানাজার উদ্যোগ নেয়। খবর পেয়ে চকরিয়া থানার পুলিশ গেলে নিউ মার্কেট এলাকায় জামায়াত–শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারেরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের চকরিয়া শহরের থানা রাস্তা মাথা থেকে চকরিয়া জনতা শপিং সেন্টার পর্যন্ত গোলযোগ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। এরপর সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী পৌরশহরে অবস্থান নিলে জামায়াত–শিবিরের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের প্রধান ডা. শোভন দত্ত আজাদীকে বলেন, ঘটনার পরপর একজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মাথার পেছনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি গাড়ি কেন ভাঙচুরের কবলে পড়ল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চকরিয়ার বন্যা কবলিত লোকজনকে ত্রাণ দিয়ে ফেরার পথে জামায়াত–শিবিরের নেতাকর্মীরা স্বাস্থ্য বিভাগের গাড়িতে আক্রমণ চালায়। তবে রক্ষা পায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর হায়দার জানান, বারবাকিয়ায় জামায়াত–শিবিরের আক্রমণে তিনি ও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য্যসহ পুলিশের ১২ সদস্য আহত হন। ঘটনার পর থেকে পেকুয়ার আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, হঠাৎ গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ কোনো গুলি ছোড়েনি। কার গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন তা তদন্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চকরিয়া পৌরশহরে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ঘটনার কিছুক্ষণ পর থেকেই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।