কক্সবাজারের চকরিয়ায় পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর অনুপস্থিতিতে গতকাল শনিবার রাতে ও পরদিন আজ রবিবার সকালে পিটুনিতে সানজিদা আক্তার (১৯) নামের এক গৃহবধূ নিহত হয়েছে।
পরে এই হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভাসুরসহ পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ খোদ ওই গৃহবধূর স্বামী আজিম উদ্দিনের।
চকরিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ভাঙ্গারমুখের কোনার পাড়া এলাকার নিজ বাড়িতে রবিবার সকাল আটটার দিকে দ্বিতীয় দফায় পিটুনির পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওই গৃহবধূ। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে ওই গৃহবধূর লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর পরই গৃহবধূর চার ভাসুর, তাদের স্ত্রী ও ননদেরা বাড়িতে তালা দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েন।
দুই বছরের শিশু সন্তান নিয়ে পেকুয়াস্থ শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া সানজিদা আক্তারের স্বামী আজিম উদ্দিন ভিডিও বক্তব্যে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন- গতকাল শনিবার সকালে তাদের দুই বছরের সন্তান সিফাত মিয়া উঠানে মলত্যাগ করে। এ নিয়ে সানজিদার সঙ্গে বড় ভাই হেলাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী মিনা আক্তারের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বড় ভাই হেলাল উদ্দিন, শাহাব উদ্দিন, আলাউদ্দিন, সালাহ উদ্দিন এবং ভাবি ও বোন জেয়াসমিন মিলে লাঠিসোটা দিয়ে তাদের দুজনকে (স্বামী-স্ত্রী) মারধর করেন। এর পরও তা মেনে নেন।
আজিম উদ্দিন বলেন, রবিবার সকালে কাজে যাওয়ার পর স্ত্রী ফোন করে জানায়, তারা মিলে তাকে মারধরের চেষ্টা করছে এবং ধারালো কিরিচ দিয়ে বসতঘরে আঘাত করছে। এরপর ফোন কেটে যায়। পরে জানতে পারি স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি স্ত্রী আর আর বেঁচে নেই। আমি আমার স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
নিহতের মা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, মেয়ে ফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মারছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের মরদেহ দেখতে পান তিনি।
সানজিদার বাবা মাহমুদুল করিম বলেন, তিন বছর আগে মেয়ের বিয়ে হয়। তার দুই বছরের ছেলে সন্তান আছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলেছে। আমি মামলা করব।
এদিকে খবর পেয়ে চকরিয়া থানার পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেই লাশ হস্তান্তরের পর পেকুয়ার মেহেরনামা আবাসন এলাকায় দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন- শুনেছি ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে। এর পরও লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিত দাস বলেন- গৃহবধূর স্বামীর দাবি অনুযায়ী এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।