কক্সবাজারের চকরিয়ায় টাকা হাওলাত দেওয়ার কথা বলে আবাসিক হোটেলে তুলে এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত চকরিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ফরহাদকে (৩০) অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত রোববার রাতে তাকে চকরিয়ার বার আউলিয়া নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর আদালতে নেওয়া হলে বিচারক তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
পুলিশ জানায়, এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীকে হোটেলে তুলে ফরহাদ। এরপর ধর্ষণের দৃশ্য আগে থেকে হোটেল রুমে বসানো গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে। পরে সেই দৃশ্য দেখিয়ে বেশ কয়েকবার ধর্ষণও করে সে। শেষ পর্যন্ত মোটা অংকের টাকা দাবি করে বসে সাবেক ছাত্রদল নেতা তৌহিদ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসীর স্ত্রী সেই টাকা দিতে না পারায় ধর্ষণের ভিডিও চিত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এই ঘটনায় ভিকটিম নারী গত বছরের ২৮ আগস্ট চকরিয়া থানায় ধর্ষণ, পর্ণোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারায় মামলা করলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে প্রায় ১১ মাসের মাথায় র্যাবের অভিযানিক দল সেই ধর্ষক ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে।
ভুক্তভোগী ভিকটিমের শ্বশুরবাড়ি উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের বার আউলিয়া নগর পাহাড়ি গ্রামে। অপরদিকে অভিযুক্ত তৌহিদুল ইসলাম ফরহাদও একই এলাকার জমির উদ্দিনের ছেলে। সে স্থানীয়ভাবে মুদির দোকানদারও।
মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, ধর্ষণের প্রথম ঘটনা সংঘটিত করা হয় ২০২১ সালের ১৪ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে। চকরিয়া পৌরশহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কের ওশান সিটি মার্কেটের তৃতীয় তলার আবাসিক হোটেল সিলভারের একটি কক্ষে ধর্ষণ, ভিডিও চিত্র ধারণের ঘটনাটি ঘটে।
ভিকটিম (বাদী) এজাহারে দাবি করেছিলেন, বাড়ির কাছে হওয়ায় প্রতিনিয়ত তৌহিদের দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রাদি ক্রয় করতেন তিনি। এই সুবাদে একটি জায়গা খরিদ করতে গিয়ে টাকার সংকট পড়ায় ৫০ হাজার টাকা হাওলাত চান তৌহিদের কাছে। সেই টাকা হাওলাত দেওয়ার কথা বলে তৌহিদ ভিকটিমকে চকরিয়া পৌরশহরের ওসান সিটি মার্কেটের আবাসিক হোটেল কক্ষে নিয়ে যান। এ সময় সাদা কাগজে দস্তখত নিয়ে জোরপূর্বক মুখ চেপে তাকে ধর্ষণ করেন তৌহিদ। গোপণে ধারণকৃত ধর্ষণের সেই ভিডিও চিত্র দেখিয়ে আরো কয়েকবার বাড়িতে গিয়ে ধর্ষণ করেন এবং দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা দিতে না পারায় ধর্ষণের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে ‘স্বপ্ন বিলাস’ নামক ফেক আইডি খুলে ধর্ষণের ভিডিওচিত্রটি ছড়িয়ে দেওয়া হয় ওই বছরের ১৪ আগস্ট।
চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা এবং নাশকতা মামলার আসামি ফরহাদকে র্যাব গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরপর আদালতে উপস্থাপন করা হলে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন আদালত।