কক্সবাজার জেলা ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে বিবদমান অনৈক্য অবশেষে ঐক্যের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। কেন্দ্রের নির্দেশে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় জেলা, চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভার জ্যেষ্ঠ নেতারা একমঞ্চে উপস্থিত হন। এরই মধ্য দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত সেই ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে নতুন চেহারায় দেখতে পেয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চলা উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় সভাপতিত্ব করেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান। আরো বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট বদিউল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, মাহবুবুর রহমান মুকুল।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় পৌরসভার এটিএন পার্ক কমিউনিটি সেন্টারের কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত কর্মীসভায় আরো বক্তব্য দেন চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, বর্তমান চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জেলা পরিষদ সদস্য লায়ন কমরুদ্দীন আহমদ, চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মনজুর আলম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ভাইস চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মিনু ও জেসমিন হক জেসি চৌধুরী, পৌরসভার সহ-সভাপতি ওয়ালিদ মিল্টন ও তপন কান্তি দাশ, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আজকের এই কর্মীসভা থেকে আমরা সবাই শপথ নিচ্ছি, ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়ে এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেব। এটাই হউক আমাদের সবার লক্ষ্য।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। সেই ভুল বোঝাবুঝি এখন আর নেই। আমরা জাতে মাতাল তালে ঠিক। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। এখন থেকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে সু-সংগঠিত করাসহ আগামী পৌরসভা নির্বাচনে এমপি জাফর আলমের নেতৃত্বে নৌকার প্রার্থীকে যে কোনো মূল্যে জিতিয়ে আনাই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
সভাপতির বক্তব্যে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের অনৈক্য নেই। আমরা সবাই জাতে মাতাল তালে ঠিক। অতএব দলের ভেতর যারা অনৈক্য সৃষ্টি করবে তাদেরকে চিহ্নিত করা হবে। আগামী পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনাই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেজন্য আমি সবার কাছ থেকে দলের প্রার্থীকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
আচরণবিধি লক্সঘন করে নৌকায় ভোট চাইলেন এমপি জাফর : এদিকে গতকালের এই কর্মীসভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধির কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে পৌরসভা নির্বাচনে (চলমান) দলীয় প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীর পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনাও করেছেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। যদিওবা করোনা অতিমারীর কারণে বর্তমানে পৌরসভা নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
নৌকায় ভোট চাওয়া এমপির নির্বাচনী আচরণবিধি লক্সঘন কী-না জানতে চাইলে পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে যাবতীয় নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্তই নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তাই এইসময়ে এমপি যদি দলের প্রার্থী বা প্রতীকে ভোট চান তা আচরণবিধিতে পড়বে না।’