চকরিয়ায় আ. লীগের দুইপক্ষে হাতাহাতি উত্তেজনা

বিষোদগার করে এক পক্ষের সংবাদ সম্মেলন

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১০ জুন, ২০২১ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ায় আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুইপক্ষেরই কয়েকজন আহত হয়েছেন। এনিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বক্তব্য দিয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পৌরসভার এক নম্বর গেইটের চিংড়ি চত্বরে হাতাহাতির ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের টহল আরো জোরদার করা হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি শান্ত হলেও উভয়পক্ষে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দলীয় নেতাকর্মী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরীর পক্ষে মাঠে কাজ না করাসহ শৃক্সখলা ভঙ্গের অভিযোগে চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি জাফর আলমের অনুসারী জাহেদুল ইসলাম লিটুকে দল থেকে বহিষ্কার করে জেলা আওয়ামী লীগ। এ সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই পরিস্থিতিতে রাতেই বিএমচর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানির জানাজায় অংশগ্রহণ করে বাড়ি ফিরছিলেন এমপি জাফর আলম। তাঁর গাড়িতেই ছিলেন পৌর সভাপতি লিটুসহ আরো কয়েকজন। তাদের গাড়িটি পৌরসভার চিংড়ি চত্বরে আসা মাত্রই কয়েকজন উচ্ছৃক্সখল যুবক এমপির গাড়ির গতিরোধ করে কটূক্তিমূলক শ্লোগান দিতে থাকেন। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় লিটুসহ গাড়ির ভেতর থাকা কয়েকজন নেমে চিংড়ি চত্বরের কাছে দেখতে পান বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরীসহ কয়েকজন অবস্থান করছেন। এ সময় তারা এমপির সাথে দুর্ব্যবহারের কারণ জানতে চাওয়া মাত্রই দুইপক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় এমপি গাড়ি থেকে নেমে একটি প্লাস্টিকের লাঠি নিয়ে উচ্ছৃক্সখল এক যুবককে (মেয়র আলমগীরের কর্মী) আঘাত করেন। পরে মেয়র ওই কর্মীর পক্ষ থেকে এমপির কাছে ক্ষমা চান। এরইমধ্যে খবর পেয়ে চকরিয়া থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এমপির অনুসারী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি (জেলা কর্তৃক পদ থেকে বহিষ্কৃত) জাহেদুল ইসলাম লিটু বলেন, ‘সামান্য বিষয়কে বড় করে তোলার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ইন্ধনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারে নামেন মেয়র আলমগীর চৌধুরী ও তার পক্ষের লোকজন। এমনকি এই ঘটনা নিয়ে গতকাল বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মেয়র আলমগীর চৌধুরীসহ তার পক্ষের নেতারা এমপিকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেছেন। যা চকরিয়ার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার একটি পাঁয়তারা। আর এসব কিছু করা হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট নির্ভর রাজনীতির অংশ হিসেবে।’
লিটু অভিযোগ করে বলেন, আমি নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরীর পক্ষে সওজের ডাকবাংলোতে নির্বাচনী সভা করেছি, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। অথচ এখন জেলা আওয়ামী লীগ আমাকে বহিষ্কার করেছে নৌকার পক্ষে কাজ করছি না এমন অজুহাতে। আমাকে বহিষ্কারের আগে তারা একটি চিঠি বা ফোনও করেনি। তাই এই বিষয়ে লিখিতভাবে এখনো আমি অবগত নই।
অপরদিকে বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী গতকাল বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন, এমপি জাফর আলমের ভাতিজা জিয়াবুল হক মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাই আমার পরাজয় নিশ্চিত করতে এমপি এবং তাঁর অনুসারী জাহেদুল ইসলাম লিটু গোপনে কাজ করছেন। তাই জেলা আওয়ামী লীগ লিটুকে পৌর সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় আমার ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।’
এ বিষয়ে এমপি জাফর আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘জেলার সিন্ডিকেট নির্ভর রাজনীতির হোতারা এসব ঘটাচ্ছেন। বিষয়টি হাই কমান্ডের নজরে আনা হয়েছে।’
আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে জানিয়ে চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের গতরাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর থেকে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ আসেনি। তাছাড়া বর্তমানে পৌর নির্বাচনের প্রচারণা চলমান থাকায় সেদিকেও তীক্ষ্ম দৃষ্টি রয়েছে পুলিশের।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিডিসির অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধসম্মেলন ছাড়া গঠিত সব ইউনিয়ন কমিটি বাতিল