কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনের ভেতর গুলি করে আরও একটি বন্য হাতিকে হত্যা করা হয়েছে। গত চারদিন আগে হাতিটিকে তাড়ানোর জন্য গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাতিটি অন্যত্র গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সেখানেই হাতিটিকে চিকিৎসা দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নেয় বনবিভাগ। তবে গত শনিবার দিবাগত রাতে হাতিটি মারা গেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য হাতিটি গুলিতে মারা যাওয়ার বিষয়টি এখনো গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেননি বনবিভাগ। এমনিতেই অসুস্থ অবস্থায় হাতিটি মারা গেছে বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল কাদের চৌধুরী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়– জেলার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী বনবিটের ছনখোলার আগা নামক এলাকায় সংরক্ষিত বনের ভেতর একটি পুরুষ বন্যহাতি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বনবিভাগে খবর দেয় স্থানীয় কাঠুরে। এর পর বনবিভাগের লোকজন গত শনিবার সকালে গুলিবিদ্ধ হাতিটির চিকিৎসা শুরু করে। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় শনিবার দিবাগত রাতেই হাতিটি মারা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান– অন্তত চারদিন আগে সংরক্ষিত বনের গোদার ফাঁড়ি ও খুটাখালীর ছড়ার পশ্চিমাংশের আম বাগান এলাকায় বন্য হাতিটি অবস্থান নেয়। এ সময় বাগান মালিক হাতিটিকে তাড়ানোর জন্য কয়েক রাউন্ড গুলি করে। সেই গুলিতে বিদ্ধ হয়ে হাতিটি পূর্ব দিকে তথা খুটাখালী বনবিটের ছনখোলার আগা নামক এলাকায় গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন আরও জানান– হাতিটির মাথা ও পিঠে দুটি গুলি বিদ্ধ হয়। সেই গুলির চিহ্নও স্পষ্ট প্রতীয়মান। একনাগাড়ে কয়েকদিন বৃষ্টিতে ভেজার কারণে বের হওয়া রক্তও ধুয়ে গেছে। তবে গুলির দাগ স্পষ্টই থেকে গেছে। এর পরও কেন বনবিভাগ গুলির বিষয়টি গোপন করছেন তা বুঝে আসছে না।
হাতিটি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে চকরিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মুস্তাকিন বিল্লাহ ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইন গতকাল রবিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করছিলেন। এ সময় যোগাযোগ করা হলে ডা. মো. মুস্তাকিন বিল্লাহ মুঠোফোনে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা এখনো ময়নাতদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছি। তাই সঠিক কী কারণে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। তবে সঠিক তথ্য পেতে হলে আগামীকাল (আজ) পর্যন্ত সময় দিতে হবে।’
কঙবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল কাদের চৌধুরী দাবি করেন– হাতিটি অসুস্থ হয়েই মারা গেছে। কোন গুলির ঘটনা ঘটেনি। হাতিটির আনুমানিক বয়স প্রায় ৯ বছর এবং এটি পুরুষ ও দাঁতাল হাতি। ওজন আনুমানিক এক টন। তিনি জানান– ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে হাতিটিকে মাটিতে গর্ত খুঁঁড়ে পুঁতে ফেলা হবে। এই ঘটনায় থানায় পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য– ইতোপূর্বেও কঙবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের খুটাখালী বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর বেশ কয়েকটি বন্য হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।