চকরিয়া সুন্দরবনে লাগানো হবে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ৩ লাখ চারা

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ২৯ মার্চ, ২০২৫ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

চিংড়ি চাষ ও লবণ উৎপাদনের জন্য সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় চকরিয়া সুন্দরবন নিধনযজ্ঞ। সেই থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই প্যারাবন উজাড় হতে হতে একেবারে সাফ করে ফেলা হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলের জানমাল রক্ষার এই কবচ। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন আঘাত হানার পর দেশিবিদেশি সংস্থার অর্থায়নে উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৩০ লাখ গেওয়া, কেওড়া, বাইন, পশুরসহ লবণসহিষ্ণু চারা রোপণ করা হয়। এতে নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া সেই ‘চকরিয়া সুন্দরবন’।

পরবর্তীতে অর্থলোভী চিংড়ি চাষি ও রাজনৈতিক ভূমিদস্যুরা দেশিবিদেশি সংস্থা কর্তৃক সৃজিত সেই প্যারাবনও উজাড় করা শুরু করে। এতে আবারও চরম হুমকির মুখে পড়ে সমুদ্র উপকূলের এই সুন্দরবন। তবে আশার কথা হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চকরিয়া সুন্দরবনের সেই খ্যাতি আবারও ফেরাতে একটি মহাপ্রকল্প হাতে নেয় মৎস্য অধিদপ্তর। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে পুরো সুন্দরবন তথা চিংড়ি জোনের রামপুর মৌজার শাখাপ্রশাখা খাল থেকে চিংড়ি ঘেরে পানি নিষ্কাশনের জন্য ২৩টি স্লুইচ গেট নির্মাণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে অতি সংকটাপন্ন এলাকায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ, ৩৫ কিলোমিটার খাল ও পুরোনো অবকাঠামো ভেঙে নতুন করে তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরপরই হাত দেওয়া হবে শাখাপ্রশাখা খালের তীর, জেগে ওঠা চরসহ সংকটাপন্ন বিভিন্ন স্থানে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ৩ লাখ চারা রোপণ করা হবে।

এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল আমিন। তিনি জানান, সমুদ্র উপকূলের চকরিয়া সুন্দরবনের অস্থিত্ব ধরে রাখাসহ উপকূলের বেড়িবাঁধের স্থায়িত্ব, টেকসই তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলবাসীকে রক্ষায় ম্যানগ্রোভ প্রজাতির প্যারাবন সৃজনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তদ্মধ্যে রোপণ করা হবে বাইন, কেওড়া, গেওয়া, পশুর প্রজাতির চারা রোপণ।

সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট চট্টগ্রামের সহযোগিতায় সম্প্রতি এই বিষয়ে উপজেলা পরিষদে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয় মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। সেখানে বাইন, গেওয়া, কেওড়া, পশুর গাছের পাশাপাশি সুন্দরবনের ঐতিহ্য সুন্দরী গাছের চারা রোপণেরও দাবি ওঠে উপস্থিত পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আশ্বস্থ করেনসুন্দরবনের ঐতিহ্য ফেরাতে অন্যান্য প্রজাতির পাশাপাশি সুন্দরী গাছের চারাও রোপণ করা হবে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেমিনারে মৎস্য চাষি, ঘের মালিক, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, ফিশিং বোট মালিক, মৎস্য আড়ত মালিক, গণমাধ্যমকর্মী, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারগণ অংশ নেন। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, দ্বিতীয় বৃহত্তম সুন্দরবন তথা সমুদ্র উপকূলের চিংড়ি জোনের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। উপকূলের রক্ষাকবচ বেড়িবাঁধ সংস্কার, স্লুইচ গেট নির্মাণ, প্যারাবন সৃজন থেকে শুরু করে মেগা প্রকল্পের এসব কাজের গুনগত মান নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রজাতির পাশাপাশি সুন্দরবনের ঐতিহ্য রক্ষায় সুন্দরী গাছের চারা রোপণও নিশ্চিত করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিয়ানমারে বাংলাদেশিরা নিরাপদ আছেন : রাষ্ট্রদূত
পরবর্তী নিবন্ধজল-পাহাড়ের উপত্যকা ডাকছে পর্যটকদের