সাংবাদিককে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার অভিযোগে চকরিয়া থানার বর্তমান ওসি মো. মনজুর কাদের ভূইয়াসহ ৫৯ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। এসব আসামির মধ্যে আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মীও রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলার বাদী মনছুর আলম মুন্না নামের এক সাংবাদিক। অপর মামলার বাদী ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের অলিয়াবাদ এলাকার মৃত মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে আকতার হোছাইন। গত ২৬ জানুয়ারি আকতার হোছাইন ও ২৭ জানুয়ারি সংবাদিক মনছুর আলম মুন্না বাদী হয়ে কক্সবাজারে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দুটি দায়ের করেন।
সংবাদিক মুন্না বাদী হয়ে করা মামলায় চকরিয়া থানার ওসি মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়াসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। অপর সাতজন হলেন, একই থানার দুই উপ–পরিদর্শক (এসআই) যথাক্রমে– ফরহাদ রাব্বি ইশান, সোহরাব সাকিব, সহকারী উপ–পরিদর্শক (এএসআই) পারভেজ ও চার কনস্টেবল। আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওসমান গনি বলেন, মঙ্গলবার (গতকাল) আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আকতার জাবেদ দায়ের করা নালিশি অভিযোগটি আমলে নেন। এ সময় শুনানি শেষে অভিযোগের তদন্তপূর্বক ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়–ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়া চকরিয়া থানায় যোগদানের পর থেকে পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে অসদাচরণ, ঘুষ–দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জনসাধারণকে জিম্মি ও ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় ও হয়রানির অভিযোগ উঠে। এসব ব্যাপারে বিভিন্ন পত্রিকায় তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হলে বাদীর ওপর ক্ষেপে গিয়ে অপহরণ ও হত্যার হুমকি দেন ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়া। ভুক্তভোগী সাংবাদিক মনছুর আলম মুন্না বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে প্রধান আসামি চকরিয়া থানার ওসির নির্দেশে সুদূর চকরিয়া থেকে কঙবাজার শহরের কৃষি অফিস সড়কের দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের কঙবাজার অফিসে এসে তাকে তুলে নিয়ে যায় একদল পুলিশ। পুলিশ অফিসারদের মধ্যে ছিলেন এসআই ফরহাদ রাব্বি ঈশান ও সোহরাব সাকিব এবং এএসআই পারভেজ। এছাড়াও ছিলেন অজ্ঞাত ৪ জন কনস্টেবল।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়–এ সময় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকা অফিসে রক্ষিত ২টি ল্যাপটপ, ৪টি পেনড্রাইভ ও অন্যান্য সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তাকে চকরিয়া থানায় নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে অমানুষিক নির্যাতন করেন আসামিরা। এভাবে একদিন আটকে রেখে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করেন ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়া। পরবর্তীতে ২১ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান মনছুর আলম মুন্না। বাদীর নিয়োজিত আইনজীবী সালাহউদ্দীন আহমদ বলেন–অনিয়ম–দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জেরে তুলে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন ও দায়েরকৃত সাজানো মামলার বাদী ওসি নিজেই। এমনকি জিআর মামলাটির নথিভুক্ত কমকর্তাও নিজেই।
এদিকে নিজেসহ একাধিক পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া। মামলা রুজু হওয়া নিয়ে কঙবাজারের পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ বলেন, চকরিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হওয়ার বিষয়ে আমি জেনেছি। বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন, তাই তদন্তের পরে বিস্তারিত জানা যাবে।
এ ব্যাপারে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ–মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আহসান হাবীব পলাশ সাংবাদিকদের বলেন, চকরিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে কেউ অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে গত ২৬ জানুয়ারি একই আদালতে মামলা দায়ের করেন আকতার হোছাইন। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তিকে কেন্দ্র করে ঈদগাঁও স্টেশনের পাশে বাদীর ভাই আবদুর রশিদের মৃত্যুর ঘটনায় এই মামলা করা হয়। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মনজুর আলমকে (ডিবি)। মামলার দ্বিতীয় আসামি বর্তমান চকরিয়া থানার ওসি এবং তৎকালীন ঈদগাঁও পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মনজুর কাদের ভূঁইয়া। মামলাটিতে পুলিশসহ ৫১ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ছাড়া অন্যান্য আসামিরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আমির হোছেন জানিয়েছেন, পুলিশসহ আওয়ামী লীগের লোকজন গুলি করে রশিদকে হত্যা করে। মামলাটি আমলে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।