চকরিয়া ও লোহাগাড়ায় আবারও বন্যা আতঙ্ক

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ায় আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া ও লোহাগাড়ায়। গত শনিবার দিনভর মাঝারি এবং গতকাল ভোর থেকে টানা ভারি বর্ষণের কারণে ইতোমধ্যে এ দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চলের লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, বর্ষণ অব্যাহত থাকলে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামলেই ফের ভয়াবহ বন্যায় রূপ নিতে পারে এখানে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মাঝে। চলতি মাসের ৭ আগস্ট থেকে লাগাতার ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরীতে নেমে আসা উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার ৯৫ শতাংশ এলাকা। এতে একনাগাড়ে তিনচারদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় ছিলেন লাখ লাখ মানুষ। সর্বশেষ ভয়াবহ বন্যার পর উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া হিসাব বিবরণী অনুযায়ী, এবারের ভয়াবহ বন্যায় অন্তত হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। মূলত একাধিক কারণেই বন্যায় বার বার এসব ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে চকরিয়াবাসীকে। এবারের বন্যার পানি এবং তাণ্ডবচিত্র অতীতের সকল বন্যার রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সেই ক্ষতের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ফের ভারি বর্ষণে মানুষের মুখ মলিন হয়ে পড়েছে। যদি আবারও ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েন তাহলে কী হবে তাদের, সেই দুশ্চিন্তা ভর করছে মানুষের মাঝে। মাতামুহুরী নদীতীরের সুরাজপুরমানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষগুলোকে সতর্ক করা হচ্ছে। একপক্ষকাল আগের বন্যার ধকল থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।

বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান, হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ, কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে জানান, গত বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব ইউনিয়ন। এখনো ইউনিয়নগুলোর বেশ কয়েকটি সড়ক এখনোও চলাচলের উপযোগী হয়নি। তার ওপর ভারি বর্ষণের কারণে মানুষের ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়েছে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মো. জামিল মোর্শেদ জানান, ভারি বর্ষণ এবং উজানের পাহাড়ি ঢলের পানি ব্যাপকভাবে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসছে। এতে টইটম্বুর হয়ে পড়েছে মাতামুহুরী নদী। এতে যে কোন সময় ফের বন্যা হতে পারে চকরিয়ায়।

ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, যেভাবে ভারি বর্ষণ ফের শুরু হয়েছে, কোথা কোথাও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে আবারও বন্যা দেখা দিতে পারে। তাই সকল জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সর্বসাধারণকে সতর্ক এবং নিরাপদে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি যেখানে পাহাড় বা ভূমিধসের আশঙ্কা থাকতে পারে সেখানকার পরিবারগুলোকে সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, লোহাগাড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে কৃষকের ফসলি জমি। বৃদ্ধি পেয়েছে খাল ও ছড়ার পানি। এতে আতংকের মধ্যে রয়েছেন খাল পাড়ের লোকজন। এছাড়া বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধসেরও আশংকা করা হচ্ছে।

জানা যায়, ভারী বর্ষণে উপজেলার আমিরাবাদ, চুনতি, আধুনগর, পুটিবিলা ও চরম্বা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কৃষকের ফসলী জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিতে ডলু, টংকাবতী, হাঙ্গর, হাতিয়া, কুলপাগলি, থমথমিয়া ও বোয়ালিয়া খালসহ বিভিন্ন ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বন্যায় সৃষ্ট খাল ও ছড়ার ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বন্যার পরে কৃষিজমি তৈরি করে পুনরায় ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। কিন্তু এবারও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানির নিচে তলিয়ে গেছে বহু ফসলী জমি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কাজী শফিউল ইসলাম জানান, উপজেলার আমিরাবাদ, আধুনগর, চুনতি ও সদর ইউনিয়নে বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত কৃষকের ফসলী জমি পরিদর্শন করেছি। জমে থাকা বৃষ্টির পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। যদি দ্রুত পানি নেমে যায় তাহলে কৃষকের তেমন ক্ষতি হবে না। বৃষ্টি অব্যাহত থেকে পানি বৃদ্ধি পেলে পুনরায় কৃষকের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উল্যাহ জানান, টানা বৃষ্টিতে এই পর্যন্ত উপজেলার কোথাও পাহাড় ধসের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী পরিবারের খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার জন্য মাইকিং করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় সাপমারা খালের বাঁধ অপসারণ চান কৃষকরা, বিক্ষোভ
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ১৪১