ব্যস্ততম চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কটির অধিগ্রহণকৃত জায়গার প্রশস্ততা হচ্ছে ১৫০ ফুট। এই মহাসড়কটিকে ভবিষ্যতে এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরেরও পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে না উঠলেও মহাসড়কটির চার স্থানে চারটি সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় জাইকার অর্থায়নে। এসব সেতু ছয় লেনের (তন্মধ্যে দুই পাশে ছোট লেন, যা স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য)। এতে আশা করা যাচ্ছে– ভবিষ্যতে একই আদলে এই মহাসড়কটির নির্মাণ কাজে হাত দেবে সরকার। এজন্য গত ছয়মাস ধরে মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থান থেকে অপসারণ করা হচ্ছে মহাসড়কের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় নির্মিত অবৈধ স্থাপনাগুলো। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় মহাসড়কটির চকরিয়ার উত্তর সীমান্তবর্তী আজিজনগর থেকে দক্ষিণ প্রান্তের খুটাখালী পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার এলাকায়। সড়ক বিভাগ নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এসব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, সড়ক বিভাগের জনগুরুত্বপূর্ণ এমন উদ্যোগের মধ্যেও চকরিয়ায় সড়ক বিভাগের জমি দখলের পর তা ভরাট করা ছাড়াও সেখানে ফের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলছে বিভিন্ন স্থানে। এমনকি সড়ক বিভাগ চকরিয়া উপ–বিভাগীয় কার্যালয়ের একেবারে অদূরে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের জিদ্দাবাজার এলাকায় মহাসড়কটির পূর্ব পাশের বিশাল জায়গার উপর নির্মাণ করা হয়েছে ফুটবল স্টেডিয়াম (মিনি টার্ফ মাঠ)।
স্থানীয় এবং সড়ক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চকরিয়ার লক্ষ্যারচর মৌজায় সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত মহাসড়কের পূর্ব পাশের জায়গার বিএস খতিয়ান নম্বর ৩৪। এই খতিয়ানের বিভিন্ন দাগের জায়গা সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত। এই দাগের পূর্বাংশে ব্যক্তি মালিকানার জায়গা কেনার পর বদরখালীর জনৈক বাসিন্দা সরওয়ার আলম সিকদার তা হস্তান্তর করেন স্থানীয় জিদ্দাবাজার এলাকার মৃত আহমদ হোসেনের ছেলে জসীম উদ্দিন, শেয়ারদার রমিজ উদ্দিন ও তার ভাই মো. সেকাব উদ্দিনকে। সেই জায়গার পশ্চিমাংশের সড়ক লাগোয়া অধিগ্রহণকৃত জায়গাও নিয়ন্ত্রণে নেয় এই দখলবাজচক্র। সেখানে শত শত ডাম্পার বালু ফেলে ও চারিদিকে বাউন্ডারি নির্মাণের পর সেখানে স্থাপন করা হয় ফুটবল স্টেডিয়াম তথা মিনি টার্ফ মাঠ। গত কয়েকমাস ধরে সেই টার্ফ মাঠ ঘণ্টা প্রতি ভাড়া দিয়ে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিক উন–নবীর ভাষ্য– এই টার্ফ মাঠ দেখতে খুব দৃষ্টিনন্দন হলেও তা যে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে তা একেবারেই দৃশ্যমান। সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তা দেখার পরও বিষয়টি রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে যাচ্ছেন। আর অবৈধ দখলদারেরা এই টার্ফ মাঠ ঘণ্টা প্রতি ভাড়া দিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আদায় করছেন মোটা অংকের টাকা। যার একটি অংশ সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।–যোগ করেন রফিক উন–নবী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন একাধিক জায়গার মালিক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরাও চাইলে সড়ক বিভাগের জায়গা নিয়ন্ত্রণে রেখে সেখানে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণপূর্বক পজিশন বিক্রি করতে পারতাম। তবে আইন এবং সড়ক বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানকে মাথায় রেখে তা করিনি। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে দখলবাজচক্রটি সড়ক বিভাগের কোটি টাকা মূল্যের জায়গায় ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করে ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া দিয়েছে।’ এই পরিস্থিতিতে সড়ক বিভাগের ভূমিকা অনেকটা বৈষম্যমূলক বলেও দাবি করেন তারা।
নিজেদের ক্রয়কৃত জায়গা লাগোয়া সামনের সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জায়গা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে মিনি ফুটবল স্টেডিয়াম তথা টার্ফ মাঠ নির্মাণের সত্যতা স্বীকার করেছেন অভিযুক্তপক্ষেরই জসীম উদ্দিন। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সড়ক বিভাগ যখনই এই জায়গা ফেরত চাইবে তখনই তাদের জায়গা ছেড়ে দেবো আমরা।’
সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তথা মিনি ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কয়েকমাস আগে সড়ক বিভাগের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকল্পে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। তৎসময় জিদ্দাবাজার এলাকায় সড়ক বিভাগের জায়গায় বালু ফেলা হচ্ছে জানতে পেরে সেখানে যায় আভিযানিক দল। তখন দখলবাজরা জানিয়েছিল, দখলের উদ্দেশ্যে ফেলা বালু অপসারণপূর্বক সড়ক বিভাগের জায়গা ছেড়ে দেবে। এমনকি এনিয়ে নোটিশও দেওয়া হয় দখলবাজদের। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সেই অঙ্গীকার রাখেনি, উল্টো নির্মাণ করে বসে মিনি ফুটবল স্টেডিয়াম তথা টার্ফ মাঠ। তাই অচিরেই সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত টার্ফ মাঠ গুঁড়িয়ে দিয়ে সড়ক বিভাগের জমি পুনরুদ্ধার করা হবে।’