কক্সবাজারের চকরিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রণাধীন ১৮টি ইউনিয়নে ২৪১ কিলোমিটারের সড়ক রয়েছে ৬২টি। তম্মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যায় একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে এখনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ১৩টি সড়ক। এসব সড়কের ওপর দিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হওয়ায় কিছুদূর পর পর গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে সংস্কারবিহীন থাকায় এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন জনগণ।
এলজিইডি চকরিয়া বলছে, গত ৬ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অতি ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার হারবাং, বরইতলী, কাকারা, সুরাজপুর–মানিকপুর, সাহারবিল, বমুবিলছড়ি। তদ্মধ্যে হারবাংয়ে চারটি, কাকারা ও বরইতলীতে তিনটি করে এবং বাকি ইউনিয়নগুলোতে একটি করে সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। ১৩টি সড়কের প্রায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এগুলো এখনও যান চলাচলের উপযোগী হয়নি। এছাড়াও বাকি সড়কগুলোতেও ছোটখাটো খানা–খন্দের সৃষ্টি হলেও সেগুলোতে জরুরিভিত্তিতে উপযোগী করে তোলায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন হারবাংয়ের চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ দৈনিক আজাদীকে জানান, ইউনিয়নের হারবাং ভায়া পেকুয়ার শিলখালী পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কটির হারবাং বাজারের পাশে ব্যাপকভাবে ভেঙে হারবাং ছড়ায় তলিয়ে গেছে। এটি ছাড়াও আরও তিনটি সড়কে একনাগাড়ে ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী হাজারো পরিবার পড়েছেন বেকায়দায়। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী–সাধারণকেও।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান বলেন, ইউনিয়নের অনেক স্থানে এখনো বানের পানি রয়ে গেছে। যেসব এলাকা একেবারে নিম্নাঞ্চল। তার ওপর অসংখ্য সড়ক যথাক্রমে শান্তিবাজার–বরইতলী ইউপি হয়ে পেকুয়া, একতা বাজার হয়ে লামার পোকখাইয়া ঝিরি সড়ক, ভুতখালী হয়ে বরইতলীর লালব্রিজ সড়ক, পহরচাঁদার সারের গুদাম হয়ে রাবার ড্যাম সড়কসহ সাতটি সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো পুনঃস্থাপন করা যায়নি।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, মাতামুহুরী নদীতে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কাটি লাগে চিরিঙ্গা–কাকারা–মাঝেরফাঁড়ি সড়কের প্রপার কাকারা পয়েন্টে। একই ধাক্কা লাগে প্রপার কাকারা টু মেনিবাজার পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম সিদ্দিকী সড়কটিতে। এখনো লণ্ডভণ্ড অবস্থায় পড়ে রয়েছে সড়ক দুটি। বর্তমানে এই দুটি ছাড়াও মাঝেরফাঁড়ি টু দক্ষিণ কাকারা সড়কটিতে যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে। শুধু যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে তাই নয়, পায়ে হেটেও এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত রীতিমতো বিপদসংকুল ও চরম দুর্ভোগের। এসব সড়কের দ্রুত সংস্কার দরকার।
এই বিষয়ে এলজিইডি চকরিয়ার উপজেলা প্রকৌশলী সাফায়াত ফারুক চৌধুরী আজাদীকে বলেন, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ৬২টি সড়কের মধ্যে ১৩টি সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায়। টাকার অঙ্কে এসব সড়কের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। এই টাকার বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করছি, অচিরেই বরাদ্দ প্রাপ্তি নিশ্চিতসহ টেকসইভাবে নির্মাণের পর সড়কগুলোতে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।