চকরিয়ায় আ. লীগ নেতার দখল থেকে ১০ একর জায়গা উদ্ধার

শতাধিক পরিবারকে পুনর্বাসনে আশ্রয়ণ প্রকল্প

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | রবিবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভূমিহীন শতাধিক পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য বিগত সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেয়। এজন্য এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সমতল শ্রেণীর প্রায় ৮ একর জায়গা নির্ধারণ করে সেখানে প্রাথমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চারদিকে ঘেরাবেড়া দেওয়াসহ সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত সেই জায়গা, আশপাশের আরও কিছুসহ ৯ একর ৭০ শতাংশ জায়গা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দখল করে নেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। দখলে নেওয়ার পর সেখানে বিশালায়তনের একাধিক পুকুর খননের মাধ্যমে মৎস্য চাষ শুরু করেন তিনি। এতে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে স্থায়ী বসতবাড়ি নির্মাণের কাজ ভেস্তে যায়। অবশেষে সেই জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সময় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা লিখিতভাবে বিভাগীয় কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা অবহিত করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ভূমিহীনদের জন্য নির্ধারিত সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি খাস জায়গার পুরোটা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এরই অংশ হিসেবে সেই জায়গায় অবৈধ ইটভাটার চিমনি এবং আশপাশে নির্মিত বেশ কিছু স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে জায়গাটির চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া, লাল পতাকা উঁচানোসহ সাইনবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন জানায়, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিগত সময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের উচিতার বিল মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত প্রায় আট একর জায়গা বাছাই করা হয়। ২০২১ সালের জুলাইয়ে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে সার্ভেয়ার জায়গাটির চারপাশে খুঁটিতে লাল নিশান টাঙিয়ে দেন। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখান থেকে যাওয়ার পরপরই খুঁটি উপড়ে ফেলেন আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। এরপর তিনি জায়গাটি নিয়ন্ত্রণে নেন। এরপর জায়গার তিন দিকে কংক্রিটের পিলার ও লোহার বেষ্টনী দেওয়া হয়। খননযন্ত্র (এক্সকেভেটর) দিয়ে জমির মাটি খোঁড়া শুরু হয়। সে সময় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। খননযন্ত্রও জব্দ করা হয়। তবে অদৃশ্য কারণে তখন ওই নেতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেনি প্রশাসন।

ফাঁসিয়াখালীর জমিজমার বিষয় দেখভাল করেন পাশের চিরিঙ্গা ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল মনছুর। তিনি আজাদীকে বলেন, সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত উচিতার বিল মৌজার টিলা ও সমতল শ্রেণীর ৯ একর ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে নেন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। সেই জায়গা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের প্রায় ৬ কোটি ১৮ লক্ষ ৫০ হাজার ১১০ টাকামূল্যের এই ভূসম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফান উদ্দিন আজাদীকে বলেন, অতীতে এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তি দখলবাজের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। পুনরুদ্ধারকৃত সেই জায়গার চতুর্দিকে ঘেরাবেড়া দেওয়াসহ লাল নিশানা এবং সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আজাদীকে বলেন, যত বড় প্রভাবশালী নেতা বা ব্যক্তি হোক না কেন, কারও দখলে এক ইঞ্চি সরকারি জায়গা থাকতে দেওয়া হবে না। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশনা মোতাবেক সরকারি জায়গা পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, শতাধিক ভূমিহীন ও গৃহহীনকে পুনর্বাসনের জন্য হাতে নেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি অবৈধভাবে দখলকারীর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয় অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে। জানা গেছে, তিনি আত্মগোপনে আছেন। তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাতিজার ছুরিকাঘাতে চাচা খুন
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের নাম বদলে ‘জাতীয় স্টেডিয়াম’