ঘোষণার চেয়ে ৫২ টন কম পণ্য রপ্তানির চেষ্টা

জড়িত ঢাকা-গাজীপুরের পাঁচ প্রতিষ্ঠান

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

পণ্য রপ্তানির আড়ালে নিত্য নতুন কৌশলে হচ্ছে অর্থপাচার। কখনো পণ্যের ওজন কম বা বেশি দেখিয়ে, আবার কখনো কন্টেনারে কোনো পণ্য না পাঠিয়ে হচ্ছে অর্থপাচার। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গত এক মাসে এ ধরনের বেশ কিছু চালান জব্দ করেছে। এরমধ্যে ঢাকার এক জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও গাজীপুরের চার পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ঘোষণার চেয়ে ৫২ টন কম পণ্য রপ্তানির চেষ্টা করেছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানিতে ঘোষণার চেয়ে কম পণ্য রপ্তানির করে রপ্তানিকাররা অর্থপাচারের চেষ্টা করেছেন।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদরের পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জেএল ফ্যাশন্স লিমিটেড স্পেনে ১৬ হাজার ৩৫০ কেজি ওমেন সোয়েটার রপ্তানির ঘোষণা দেয়। চালানটিতে রপ্তানির লক্ষ্যে গত ৭ সেপ্টেম্বর রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলীর এমএফ টাওয়ারের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যারাইজ ইন্টারন্যাশনাল বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করে। একইদিন রপ্তানি চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় কাস্টমস কর্মকর্তারা পণ্যের ঘোষিত ওজনের চেয়ে ১০ হাজার ৫৬১ কেজি কম পণ্য পান। রপ্তানিকারক বন্ড সুবিধার পণ্য সঠিক পরিমাণের চেয়ে বেশি রপ্তানি দেখিয়ে অবশিষ্ট পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করে বন্ডেড সুবিধায় আমদানি পণ্যের অপব্যবহার করেছেন বলে কাস্টমস কর্তাদের মনে হয়েছে। রপ্তানি চালানটির শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২ কোটি ৭৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫১ টাকা। অপর এক চালানে জেএল ফ্যাশন্স লিমিটেড স্পেনে ১৫ হাজার ৬৬ কেজি ওমেন সোয়েটার রপ্তানির ঘোষণা দেয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলীর এমএফ টাওয়ারের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যারাইজ ইন্টারন্যাশনাল বিল অব এঙপোর্ট দাখিল করে। গত ৭ সেপ্টেম্বর রপ্তানি চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় কাস্টমস কর্মকর্তারা পণ্যের ঘোষিত ওজনের চেয়ে ৯ হাজার ৯০২ কেজি কম পান। রপ্তানি চালানটির শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২ কোটি ৫১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৬৮ টাকা।

অপরদিকে গাজীপুর সদরের স্মাগ সোয়েটার লিমিটেড ১ হাজার ৭৭১ কার্টনে ১৯ হাজার ৫৭৪ কেজি ওমেন সোয়েটার রপ্তানির ঘোষণা দেয়। পণ্য চালানটি রপ্তানির জন্য গত ৩১ আগস্ট নগরীর কোতোয়ালীর আলকরণ এলাকার সিএন্ডএফ এজেন্ট স্মাগ সোয়েটার লিমিটেড বিল অব এঙপোর্ট দাখিল করে। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর কায়িক পরীক্ষায় ১০ হাজার ৫৩ কেজি ওজন কম পান কাস্টমসের কর্মকর্তারা। গাজীপুরের ইঙোরা অ্যাপারেলস লিমিটেড ৬ হাজার ৪৯৪ কেজি লেডিস স্কার্প, ইউনিসেঙ ভেস্ট ও লেডিস শার্ট রপ্তানির ঘোষণা দেয়। চালানটি রপ্তানির লক্ষ্যে রপ্তানিকারকের প্রতিনিধি নগরীর স্ট্র্যান্ড রোড রশিদ বিল্ডিংয়ের সিএন্ডএফ এজেন্ট আল হোসাইন শিপিং লাইন্স গত ৩০ আগস্ট বিল অব এঙপোর্ট অব দাখিল করে। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় কাস্টমসের কর্মকর্তারা চালানের ঘোষিত ওজনের চেয়ে ২ হাজার ৭৭৩ কেজি কম পান। ঢাকার বাড্ডার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যালায়েন্স লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার লিমিটেড ৪৩০ কার্টনে ৬ হাজার ৬৬৫ কেজি কম্প্লিট লেডিস লেদার বুট রপ্তানির ঘোষণা দেয়। চালানটি রপ্তানির লক্ষ্যে গত ২৩ আগস্ট নগরীর আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকার সিএন্ডএফ এজেন্ট এসএস প্রিন্স কার্গো সিস্টেম বিল অব এঙপোর্ট দাখিল করে। তারপর দিন ২৪ আগস্ট কাস্টমসের কর্মকর্তারা কায়িক পরীক্ষায় রপ্তানিকারক ৩ হাজার ২৫৬ কেজি কম পান। এছাড়া অ্যালায়েন্স লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার লিমিটেড অপর এক রপ্তানি চালানে ৪৪০ কার্টনে ৫ হাজার ৫০০ কেজি কম্প্লিট লেডিস লেদার বুট রপ্তানি ঘোষণা দেয়। চালানটি রপ্তানির জন্য গত ২৩ আগস্ট নগরীর আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকার সিএন্ডএফ এজেন্ট এসএস প্রিন্স কার্গো সিস্টেম বিল অব এঙপোর্ট দাখিল করে। কিন্তু পরীক্ষায় রপ্তানিকারক পণ্যের ঘোষিত ওজনের চেয়ে ২ হাজার ৩৪ কেজি কম পাওয়া যায়। অ্যালায়েন্স লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার লিমিটেড অপর এক রপ্তানি চালানে ৪৪০ কার্টনে ৭ হাজার ৩৫০ কেজি কম্প্লিট লেডিস লেদার বুট রপ্তানি ঘোষণা দেয়। চালানটি রপ্তানির জন্য গত ২১ আগস্ট নগরীর আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকার সিএন্ডএফ এজেন্ট এসএস প্রিন্স কার্গো সিস্টেম বিল অব এঙপোর্ট দাখিল করে। তবে ২৪ আগস্ট কাস্টমসের কর্মকর্তারা কায়িক পরীক্ষায় রপ্তানিকারকের ঘোষিত পণ্যের চেয়ে ৪ হাজার ৪৫৩ কেজি কম পান। গাজীপুরের পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান খানটেঙ ফ্যাশন্স লিমিটেড নেদারল্যান্ডে ১৫ হাজার ২১৫ কেজি লেডিস ফ্লিস জ্যাকেট রপ্তানির ঘোষণা দেয়। পোশাকগুলো রপ্তানির জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গত ৯ আগস্ট বিল অব এঙপোর্ট দাখিল করে নগরীর বারিক বিল্ডিং এলাকার সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান সাইফ অ্যান্ড কো.। পরদিন ১০ আগস্ট পণ্যের কায়িক পরীক্ষায় দেখা গেছে, রপ্তানিকারক খানটেঙ ফ্যাশন্স লিমিটেড পণ্যের কার্টন সংখ্যা ও পিস ঘোষণা মতো পাওয়া গেলেও ঘোষিত নেট ওজন ও কায়িক পরীক্ষায় পাওয়া নেট ওজনের পার্থক্য ৬২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ কায়িক পরীক্ষায় পণ্যের ওজন পাওয়া যায় ৫ হাজার ৭২৮ কেজি। মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে রপ্তানিকারক ৯ হাজার ৪৮৭ কেজি কম পণ্য রপ্তানির চেষ্টা করেছে। পুরো চালানের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ৬৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৪ টাকা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি দৈনিক আজাদীকে বলেন, সম্প্রতি আমরা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি চালান আটক করেছি। যারা ঘোষণার চেয়ে পণ্য কম রপ্তানি চেষ্টা করেছেন। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা কাস্টমস আইনে মামলা দিয়েছে। মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এসব রপ্তানিকারকরা মূলত অর্থপাচারের চেষ্টা করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশি-বিদেশি জাহাজের দ্বন্দ্ব প্রকট
পরবর্তী নিবন্ধ২৬ মাস বাক্সবন্দি থাকার পর চালু হলো আইভাস মেশিন