ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বিভিন্ন উপজেলায় প্রস্তুতি

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ at ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাব থেকে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা ও পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র ও কন্ট্রোল রুম। এছাড়া মাইকিং ও বিভিন্ন উপায়ে প্রচার চালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের।

মীরসরাই : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, গতকাল মঙ্গলবার থেকে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ইউএনও মাহফুজা জেরিন গতকাল দুপুরে বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলার উপকূলীয় ইছাখালী, সাহেরখালী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নে মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের ব্যবস্থা রয়েছে। মীরসরাই উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) টিম লিডার এম সাইফুল্লাহ দিদার বলেন, ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় আমাদের ৮০টি টিম মাঠে থাকবে। এক হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান মীরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী।

সন্দ্বীপ : সন্দ্বীপ প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে বৈরি আবহাওয়ায় গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রামের সাথে স্টিমার ও স্পিড বোট চলাচল বন্ধ ছিল। তবে সকালের দিকে সার্ভিস বোট দিয়ে যাত্রীরা নদী পারাপার করলেও সকাল ১০টার পর তাও বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। বেড়িবাঁধের বাইরে ও বেড়িবাঁধের আশপাশের বাসিন্দাদের নিকটস্থ নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র ও সাইক্লোন শেল্টারে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দীন মিশন আজাদীকে জানান, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সচেতন করাসহ যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

পেকুয়া : পেকুয়া প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। গতকাল সকাল থেকে প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মাইকিং, সাইক্লোন শেল্টার খোলা, নিরাপদ পানি, শুকনো খাবার ও মোমবাতি মজুদসহ মেডিকেল টিম এবং কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১২১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জনগণকে সচেতন করতে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি : নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাত থেকে লোকজনকে নিরাপদে রাখতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। গতকাল বিকেলে পাহাড়ি এ জনপদের সর্বত্র মাইকিং করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সাথে স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখাসহ সংশ্লিষ্টদের সবধরনের সতর্কাবস্থানে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন, সরকারী কর্মচারীকর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল হওয়ায় সবাই চলে এসেছে। রাতে তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। আর উপজেলায় ঝুঁকিতে বসবাসকারীরা যেন অনিরাপদ না থাকে তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসতে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আর ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় খোলা রাখা হয়েছে কন্ট্রোল রুমও।

বাঁশখালী : বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীতে ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তারের সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার সকালে অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় ১১০টি সাইক্লোন শেল্টারমুজিব কেল্লা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্র পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার, পানি, আলো, শিশুখাদ্য, ওষুধ, স্যালাইন, শৌচাগার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় বসবাস করছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনার প্রস্তুতি চলছে। উপজেলার ৭১ ইউনিটে ১৪২০ সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও আনসার সদস্যদেরও প্রস্তত থাকতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে কন্ট্রোলরুম ও হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। রাত দশটা নাগাদ এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত বাঁশখালীর ছনুয়া, চাম্বল, শীলকুপ ও খানখানাবাদে বেশ কিছু লোক আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। বাঁশখালীর প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান মেম্বারদের নেতৃত্বে ও ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুত্তি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমাজ বিনির্মাণে ১৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে প্রয়াস
পরবর্তী নিবন্ধমনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সংগ্রামী জীবন সকলের জন্য অনুসরণীয়