বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। শক্তি বৃদ্ধি করে এটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার ভারতের ওড়িশা রাজ্যের পুরী ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূলের উপর দিয়ে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির অতিক্রম করার সম্ভাব্য যে এলাকা, সেখান থেকে বাংলাদেশের উপকূল ডান দিকে। আর ডান দিকে থাকার কারণে বাংলাদেশের উপকূলে এর প্রভাব থাকবে অপেক্ষাকৃত বেশি। বাঁ দিকে থাকলে সাধারণত কম থাকে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ সতর্কবর্তায় (ক্রমিক–৬) চট্টগ্রাম, কঙবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলেমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কঙবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিলেমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৮৫ কিলেমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলেমিটার দক্ষিণ–দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম–উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলেমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলেমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘন্টায় ৮৮ কিলেমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ের ‘দানা’ নামটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার–এর দেওয়া।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাঈল ভূইয়া জানান, আজ চট্টগ্রামসহ পাশ্বর্তী এলাকাসমূহের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ভারতের আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, পূর্ব–মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে ক্রমে উত্তর–পশ্চিম দিকে সরছে দানা। এটির প্রভাবে সমুদ্রের উপর ঝড় বইছে। ‘শক্তি বাড়িয়ে রাতে (গত রাত) ‘প্রবল’ আকার নিলে বাতাসের বেগ আরও বাড়বে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে।
কানাডার সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয় এর আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, জাপানের কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের শীর্ষের তাপমাত্রার চিত্র অনুযায়ী, দানা এর কারণে যে ঘূর্ণ্যমান মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে তার অগ্রবর্তী অংশে অবস্থিত একটি ভারি বৃষ্টি–যুক্ত একটি অংশ গতরাত ৭ টার পর থেকে ৩ টার মধ্যে বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর উপর দিয়ে স্থল ভাগে প্রবেশ করার আশংকা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারী থেকে খুবই ভারূ বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর উপরে।