পটিয়া থানায় দায়িত্বরত ঘুমন্ত পুলিশ সদস্যের সাথে গ্রেপ্তার হওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতার সেলফি তার ফেসবুকে পোস্ট করার পর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া আরেক ছাত্রলীগ নেতার সাথে ভিডিও কলে তার কথা বলার একটি স্ক্রিনশটও ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশি হেফাজতে থেকেও মুঠোফোন ব্যবহার, সেলফি তোলা ও ভিডিও কলে কথা বলার ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। তারা হলেন, পটিয়া থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) মো. মাহমুদুল হক ও কনস্টেবল মো. সেলিম। এদিকে ক্লোজড হওয়ার খবর শুনে কনস্টেবল মো. সেলিম অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
গ্রেপ্তার ওই ছাত্রলীগ নেতা শোয়াইব উল ইসলাম ওরফে মহিম (২১)। তিনি পটিয়ার বড়লিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল বশরের ছেলে এবং একই ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি। ‘শোয়াইব উল ইসলাম ওরফে মহিম’ নামেই তাঁর একটি ফেসবুক আইডি রয়েছে। গত বুধবার রাতে পটিয়া থানার ভেতরে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় শোয়াইব উল ইসলাম নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একাধিক ছবিও পোস্ট দেন। একটি ছবিতে দেখা যায়, তাঁর পেছনে চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছেন এক পুলিশ কনস্টেবল। ওই ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘ঘুম ভালোবাসিরে এএএ। জীবন যেমনই হোক, বিনোদন মিস করা যাবে না।’
পরে থানার ভেতর থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় তোলা আরেকটি ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘এই দিন দিন নয়, আরও আছে।’ এসব পোস্ট ওই ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক ওয়াল থেকে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া থানার ভেতর থেকেই তুহিন নামের আরেক ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন শোয়াইব। ওই ভিডিও কলের স্ক্রিনশট ফেসবুকে পোস্ট করে তুহিন লেখেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আপসহীন লড়াইয়ে দখলদার বাহিনীর হাতে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার পটিয়া উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী মো. শোয়াইব–উল ইসলাম মহিমের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থানায় পুলিশি হেফাজতে থাকা একজন আসামির হাতে মুঠোফোন থাকা, ফেসবুক ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া এবং তাঁকে হাজতখানায় না রেখে কর্তব্যরত কর্মকর্তার কক্ষে রাখার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা শোয়াইব উল ইসলামকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তারের পর থানায় আনা হলেও অভিযানে থাকা দল তাৎক্ষণিকভাবে আরেকটি অভিযানে চলে যায়। সেই সুযোগে তিনি নিজের কাছে লুকিয়ে রাখা একটি মুঠোফোন ব্যবহার করে থানার ভেতর থেকে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। পরবর্তীতে তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তল্লাশিতে ফোনটি পাওয়া যায়নি। দায়িত্বে অবহেলার কারণেই সংশ্লিষ্ট দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শোয়াইব উল ইসলামের ফেসবুক আইডিতে ওই পোস্টগুলো দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, পোস্টগুলো মুছে ফেলা হয়েছে। তবে এর আগেই সংশ্লিষ্ট ছবি ও পোস্টের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।












