ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গাছের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

অভিযোগ মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় ঘর থেকে ডেকে নিয়ে এক যুবককে গাছের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে সংঘবদ্ধ মাদকসেবী ও বিক্রেতারা। নিহতের নাম মো. সাহাব উদ্দিন (৩৭)। গতকাল শনিবার সকালে সাতকানিয়া পৌরসভার দক্ষিণ রামপুর বণিক পাড়া সুবেদার পুকুর সংলগ্ন রাস্তার পাশে বাঁশঝাড় থেকে দুই পা বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। এর আগে শুক্রবার সকালে ঘর থেকে তাকে ডেকে এনে দেওদিঘী এলাকায় গাছের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। নিহত সাহাব উদ্দিনও মাদকাসক্ত ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন ও পরিবার সূত্র। সাহাব উদ্দিন উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের দক্ষিণ মাদার্শার নুর আহমদের পুত্র।

সাতকানিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এনামুল কবির জানান, গতকাল সকালে পৌরসভার দক্ষিণ রামপুর বনিক পাড়া সুবেদার পুকুর সংলগ্ন রাস্তার পাশে বাঁশঝাঁড়ের ভেতর দুই পা বাঁধা অবস্থায় একটি লাশ দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সাহাব উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে অন্য কোথাও তাকে হত্যা করে এখানে বাঁশঝাড়ে লাশ ফেলে গেছে।

এদিকে, সাহাব উদ্দিনকে বাটাম দিয়ে পিটানোর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এওচিয়ার আবুল হাসান জানান, গত শুক্রবার বিকেলে আমি দেওদিঘী ভূমি অফিসের পূর্ব পার্শ্বের বিলে আলু ক্ষেত দেখতে যাই। তখন একটু দূর থেকে আমার কানে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। পরে আমি সেখানে গিয়ে দেখতে পাই সাহাব উদ্দিনকে দুই পা বেঁধে ফেলা রাখা অবস্থায় ৭ জন মিলে গাছের বাটাম দিয়ে বেধড়ক পিটাচ্ছে। আমাকে সেখানে দেখে মারধরকারীরা গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা সেখানে যাওয়ার অপরাধে আমাকেও আটকের পর মারধর করে। পরে আমি এক বন্ধুর সহায়তায় সেখান থেকে চলে আসি।

নিহতের স্ত্রী ফারজানা আকতার জানান, শুক্রবার সকালে পা কাটা শহীদ ও মিনহাজ গিয়ে ঘর থেকে আমার স্বামীকে ডেকে সিএনজি টেঙি যোগে নিয়ে আসে। তখন আমি আমার স্বামীকে তাদের সাথে যেতে নিষেধ করি। কারণ তারা এলাকায় মাদকসেবী ও বিক্রেতা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু স্বামী আমার কথা না শুনে তাদের সাথে যায়। ঘর থেকে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ফোন করি। তখন ফোন রিসিভ করেনি। বিকেলের দিকে পুনরায় ফোন করলে রিসিভ হলেও কথা বলেনি। সারারাত চিন্তায় ছিলাম। গতকাল সকালে খবর আসে পৌরসভার দক্ষিণ রামপুর বণিক পাড়া এলাকায় বাঁশঝাঁড়ে আমার স্বামীর লাশ পড়ে আছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন লোকের কাছে জানতে পারলাম পা কাটা শহীদ, মিনহাজ, আলমগীর ও এরশাদসহ ৭ জন মিলে দেওদিঘী এলাকায় গাছের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। এদিকে, নিহত সাহাব উদ্দিনও মাদকাসক্ত ছিল বলে জানিয়েছেন তার বাবা নুর আহমদ।

সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউল হক চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে বণিক পাড়া থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে অন্য কোথাও পিটিয়ে হত্যা করে লাশ এখানে এনে ফেলে রাখা হয়েছে। তার দুই পা বাঁধা ও একটি হাত ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরকে চিহ্নিত করতে পুলিশ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে চোর সন্দেহে গণপিটুনি, প্রাণ গেল যুবকের
পরবর্তী নিবন্ধভাসানচরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ ৯ রোহিঙ্গা, এক শিশুর মৃত্যু