ঘরে বসে অনলাইনে ১ লাখেরও বেশি টিন নম্বরধারীর রিটার্ন জমা

আয়কর খাতে ব্যাপক আশা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

আয়কর রিটার্ন জমাদানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ঘরে বসে নিজে নিজে আয়কর জমা দেয়ার অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় টিন নম্বরধারীরা কারো কোনো সহায়তা ছাড়াই নিজের রিটার্ন নিজে প্রস্তুত করে অনলাইনেই জমা দিতে পারছেন। করও পরিশোধ করতে পারছেন অনলাইনে। নতুন এই সিস্টেম দেশে ট্যাক্স নেটের সম্প্রসারণসহ আয়কর খাতে ব্যাপক আশা জাগিয়েছে। ইতোমধ্যে এক লাখেরও বেশি টিন নম্বরধারী অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন।
সূত্র বলেছে, চলতি বছরে দেশের আয়কর থেকে ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ৬০৩ জন ইনকামট্যাক্স প্রদানকারীর কাছ থেকে বিশাল অংকের এই অর্থের যোগান আসবে। চট্টগ্রামে চারটি করাঞ্চলের ৪ লাখ ২২ হাজার ৪২৫ জন করদাতার কাছ থেকে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। অবশ্য গতবছর চট্টগ্রামের চারটি করাঞ্চলে সর্বমোট রিটার্ন দাখিল করেছিলেন ২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৪টি।
সারাদেশে টিন নম্বরধারীদের সকলেই রিটার্ন দাখিল করেন না। আবার রিটার্ন দাখিলকারীদের সকলেই ট্যাক্স পরিশোধ করেন না। অনেকেই জিরো ট্যাক্সের আওতাধীন। আবার অনেকের আয় থাকলেও নিয়ম কানুন না জানায় ট্যাক্স প্রদান করেন না। তাদের বৈধ আয়ও অপ্রদর্শিত আয়ে পরিণত হচ্ছে, তাদের টাকা হয়ে যাচ্ছে কালো টাকা, সম্পদ হয়ে যাচ্ছে অবৈধ। দেশের বহু মানুষই নিজের অজান্তেই কালো টাকা এবং অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই ইনকামট্যাক্স প্রদানের ব্যাপারটিকে হয়রানি মনে করে এর থেকে দূরে থাকছেন। অনেকেই ট্যাক্স দিতে চাইলেও নিয়ম কানুনের গ্যাড়াকলে পড়তে চান না বিধায় আয়কর প্রদান করেন না। এসব বিষয় চিন্তা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বৈপ্লবিক একটি সিস্টেমের সূচনা করেছে। গত অক্টোবর মাসে দেশে প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে ই-রিটার্ন দাখিলের সুবিধা। নিজেদের অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় এই সিস্টেম ডেভলপ করা হয়। বহুমুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তা দেশের টিন নম্বরধারীদের জন্য চালু করা হয়। এই সিস্টেমে যে কোনো টিন নম্বরধারী ঘরে বসেই নিজেই নিজের রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করতে পারছেন। যাদের জিরো ট্যাক্স তাদের কোনো ধরনের ট্যাক্স পরিশোধ করতে হচ্ছে না। আর যাদের ট্যাক্স প্রদান করতে হচ্ছে তাদেরকে ই-পেমেন্ট দিতে হচ্ছে। রাতে দিনে চব্বিশ ঘণ্টা যে কোনো সময় এই রিটার্ন দাখিল করা যাচ্ছে।
আয়কর বিভাগের চালু করা এই সিস্টেমটা খুবই সহজ এবং ব্যবহারবান্ধব বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, যাদের করযোগ্য আয় নেই, কিন্তু টিআইএন আছে তারা খুব সহজেই ঘরে বসে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। যাদের করযোগ্য আয় আছে তারা রিটার্নের সাথে খুব সহজে ই-রিটার্ন সিস্টেম থেকেই ই-পেমেন্ট করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন সাবমিট করতে পারছেন।
যাদের আইবিএএস++ এর মাধ্যমে বেতন ভাতা হয় তাদের বেতনের উপর ট্যাক্স কাটা হয় তারাও এই সিস্টেমে অনায়াসে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারছেন।
অনলাইন রিটার্ন দাখিলের ওয়েব সাইট: https://etaxnbr.gov.bd/#auth/sign-in
এই লিংকে ঢুকলে আয়কর বিভাগের ডিজিটাল সেবা পেইজে যাওয়া যাবে। যেখানে ই-রিটার্ন সিলেক্ট করলেই পাওয়া যাবে রিটার্ন দাখিল সিস্টেম। শুরুতে নিজের নামে নিবন্ধিত মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের সময় নিজের পাসওয়ার্ড নিজে সেট করে নিতে হবে। পাসওয়ার্ডটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রেজিস্ট্রেশন করার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট টিন নম্বরধারীর ই-রিটার্ন অ্যাকাউন্ট হয়ে যায়। নিজের টিন এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে যে কোনো সময় পৃথিবীর যে কোনো জায়গা থেকে এই অ্যাকাউন্টে সাইন ইন করে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল, অনলাইনে আয়কর পরিশোধের সুবিধা, রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ও আয়কর সনদ প্রাপ্তি এবং ইটি ডিএস সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
ট্যাক্সের হিসাবনিকেশও অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট টিন নম্বরধারী শুধুমাত্র বেসিক তথ্যগুলো সিস্টেমে প্রদান করে ফরম পূরণ করলে সিস্টেমই হিসাব করে দিবে মোট আয় কত, করের পরিমাণ কত, কত রিবেট হলো কিংবা রিটার্নের সাথে কত টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে।
তবে ই-রিটার্ন ব্যবহারের জন্য বায়োমেট্রিক্যাল ভেরিফাইড মোবাইল ফোন নম্বর প্রয়োজন হবে। সহজ ব্যবহার ও ভালো কাজের জন্য একটি ল্যাপটপ বা একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহার করলে সুবিধা। মোবাইল ফোনে সবসময় সব অপশন ঠিকঠাকভাবে কাজ করে না। এই সিস্টেমে আয়কর তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে টিন এবং পাসওয়ার্ড গোপন রাখতে হবে। ই-রিটার্ন ব্যবহার করার সময় সব প্রয়োজনীয় নথি কিংবা কাগজপত্র সঙ্গে রেখে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ইনপুট দিতে হলেও কোনো কাগজপত্র অনলাইনে জমা দিতে হবে না। প্রয়োজন হলে ট্যাক্স অফিস থেকে পরবর্তীতে যোগাযোগ করে কাগজপত্র জমা দেয়ার অনুরোধ করা হতে পারে। ই-রিটার্নের সব হিসাবই সংশ্লিষ্ট টিন নম্বরধারীর দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে।
আয়কর বিভাগ থেকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। গত ১০ অক্টোবর শুরু করা এই সিস্টেমে ইতোমধ্যে দেশের এক লাখেরও বেশি টিন নম্বরধারী রিটার্ন দাখিল করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের জোন-১ এর কমিশনার সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি খুবই সহজ এবং ব্যবহারবান্ধব একটি সিস্টেম। এই সিস্টেম ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চট্টগ্রামেও অসংখ্য টিন নম্বরধারী কারো সাহায্য ছাড়া নিজের রিটার্ন নিজেই অনলাইনে জমা দিচ্ছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুরাদের নামে মামলার আবেদন মামুনুলের আইনজীবীর
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধান শিক্ষকসহ দু’জনের বেতন বন্ধ, একজন বরখাস্ত