মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের ৫০ মাস পর ‘হোল্ডিং ট্যাক্স’সহ (গৃহকর) রাজস্ব বিভাগের দুটি খাতকে অটোমেশন বা অনলাইনভিত্তিক করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। অপর খাতটি হচ্ছে ‘ট্রেড লাইসেন্স’। দীর্ঘদিনের ম্যানুয়েল পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে অনলাইনের আওতায় আসায় গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা নাগরিকরা ঘরে বসেই পাবেন। গ্রাহকরা সহজেই গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্স ফি জমা দিতে পারবেন। নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ এবং নবায়ন করতে পারবেন। এতে সেবাপ্রত্যাশী লোকজনের ভোগান্তি ও দুর্ভোগ কমবে। একইসঙ্গে দূর হবে প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম। নিশ্চিত হবে স্বচ্ছতা। আজ সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর এ অনলাইন কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স’ ও ‘ট্রেড লাইসেন্স’ কার্যক্রমকে অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘আর্বান পাবলিক পাবলিক এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায়। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালে সাতটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল চসিক। পরবর্তীতে হোল্ডিং মালিক এবং ট্রেড লাইসেন্স গ্রহীতাদের তথ্য নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে এন্ট্রি করা হয়। সবগুলো তথ্য আপলোড শেষ হওয়ায় অটোমেশন কার্যক্রম উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত দেন মেয়র।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নগরে হোল্ডিং আছে দুই লাখ ৯৮১টি। এর মধ্যে এক হাজার ৫১৬টি সরকারি এবং এক লাখ ৯৯ হাজার ৪৬৫ টি হোল্ডিং বেসরকারি। একই সময় পর্যন্ত নতুন ও নবায়ন মিলিয়ে ট্রেড লাইসেন্স সংখ্যা ৬৭ হাজার ১২৯টি।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, অটোমেশন কার্যক্রমের আওতায় আসায় যে কেউ বাড়িতে বসে পৌরকর পরিশোধ করতে পারবেন। করদাতা তার কর সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্যও জানতে পারবেন ঘরে বসেই। অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় হোল্ডিং ট্যাঙ নিয়ে কর আদায়কারীদের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়মের অভিযোগ থাকে সেগুলোও কমে আসবে।
কীভাবে নাগরিকগণ অনলাইনে সেবা পাবেন জানতে চাইলে চসিকের আইটি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ই-রেভিনিউ অপশনে যেতে হবে। সেখানে গ্রাহকের মোবাইল ও মেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর ট্রেড লাইসেন্স এবং ই-হোল্ডিং সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। তবে গ্রাহকদের আগে ই-হোল্ডিং নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত যে হোল্ডিং নম্বর আছে তার পাশাপাশি ই-হোল্ডিং নম্বর হবে আলাদা। অনলাইন পেমেন্টের যতগুলো সুবিধা আছে অর্থাৎ ব্যাংক, বিকাশ বা কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্টের অপশন থাকবে সেখানে। আমাদের বিভিন্ন মার্কেটের সেলামি বা ভাড়াও অনলাইনে পরিশোধ করা হবে। ইতোমধ্যে কি কি ডাটা এন্ট্রি করা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, যতগুলো হোল্ডিং এবং ট্রেড লাইসেন্স আছে সবগুলোর তথ্য আপলোড করেছি। কিছু কিছু হোল্ডিংয়ের স্ট্রাকচারের বর্ণনা আছে।
৫০ মাসের অপেক্ষা :
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালিত করায় চসিকের হোল্ডিং ট্যাঙের আলোচিত এসেসমেন্ট কার্যক্রম স্থগিত করেছিল মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ‘হোল্ডিং ট্যাঙ’ কার্যক্রম বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের পাঠানো একটি পত্রে ‘হোল্ডিং ট্যাঙের পুর্নমূল্যায়নে (রি-এসেসমেন্ট) প্রথাগত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অনুসরণ না করার নির্দেশনা ছিল। একইসঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে অন-লাইন ভিত্তিক অটোমেশন পদ্ধতি চালু করারও নির্দেশনা দেয়া হয়।
এরপর ১৯ ডিসেম্বর চসিকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দাহা স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেন। এতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ‘আর্বান পাবলিক পাবলিক এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামসহ সাতটি সিটি কর্পোরেশনকে অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম শুরুর কথা বলা হযেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ওই প্রকল্পের আওতায় কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি।’
সর্বশেষ ২০১৮ সালে ওই প্রকল্পে যুক্ত হয় চসিক। যার বাস্তবায়ন হবে আজ মঙ্গলবার থেকে। অর্থাৎ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ৫০ মাস পর অটোমেশনের আওতায় আসছে চসিক। অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নে চসিক সাতটি ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। ব্যাংকগুলো হচ্ছে সোনালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ব্রাক ব্যাংক।