শেষের পথে শাবান মাস। সমাগত পবিত্র মাস রমজান। ‘আহলান সাহলান মাহে রমজান’। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মাসটি। এ মাসে সিয়াম–সাধনার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন তারা। রোজা রাখার পাশাপাশি সেহেরি, ইফতার ও তারাবির নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ধর্মীয় বিধি–বিধান পালন করতে হয় এ মাসে। তাই এ মাসে ব্যস্ততাও কম নয়। সে ব্যস্ততা সামনে রেখে ঘরে ঘরে চলছে নানা প্রস্ততি।
হিজরি বর্ষপঞ্জি চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। ২৯ অথবা ৩০ দিনে পূর্ণ হয় হিজরি মাস। আজ ২৭ শাবান। ওই হিসেবে আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার রমজান মাসের চাঁদ দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে সোমবার চাঁদ দেখা গেলে ওই রাতে এশার নামাজের পর আদায় করতে হবে তারাবির নামাজ। সেহেরি খেয়ে রোজা রাখবেন মঙ্গলবার। যদি সোমবার চাঁদ দেখা না যায় তাহলে মঙ্গলবার তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে। বুধবার রোযা রাখতে হবে।
রমজানে অধিকাংশ মসজিদে আদায় করা হয় খতমে তারাবি। এজন্য বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে হাফেজ নিয়োগ প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যে প্রায় মসজিদে হাফেজ নিয়োগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত দুই বছর দেশের সকল মসজিদে একই পদ্ধতিতে খতমে তারাবি পড়ানোর জন্য আহবান জানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ বছরও এমন আহবান জানানো হতে পারে। রোযার অন্যতম অনুষঙ্গ সেহেরি ও ইফতার। নির্দিষ্ট সময়ে সেহেরি খেতে হয়। তারপর দিনভর রোযা রেখে সূর্যাস্তের পর রোযাদাররা ইফতার করেন। ইফতার ও সেহেরিতে সাধ্য অনুযায়ী ভালো খাবার আযোজন করার চেষ্টা করে রোযাদাররা। ধনী–গরিব সব পরিবারে এ জন্য থাকে বাড়তি প্রস্তুতি। তাই রমজান উপলক্ষে খেজুর, ছোলা, চিনি, মাছ–মাংসসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য ক্রয়ে বিশেষ জোর দেয়া হয় ঘরে ঘরে। ইতোমধ্যে অনেক পরিবারে বাজার সদাই করা হয়েছে। অনেক পরিবার দুয়েকদিনের মধ্যে করবেন।
অবশ্য এ মাসের বাজার–সদাই নিয়ে বেশিরভাগ পরিবারে প্রবণতা আছে– পুরো রমজান মাসের বাজার একদিনেই করে ফেলার। অর্থাৎ এক ধরনের মজুদদারি প্রবণতা আছে ক্রেতাদের মাঝেও। গত কয়েকদিন ধরে বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এর সত্যতা মিলেছে। গতকাল বহদ্দারহাট বাজারের একটি মুদি দোকান থেকে বাজার করছিলেন টিপু নামে এক ক্রেতা। তিনি আজাদীকে বলেন, রমজানে ক্লান্তি থেকে বাঁচতে পুরো মাসের বাজের করে নিচ্ছেন। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবাই এক সাথে এ ধরনের (একদিনে পুরো মাসের বাজার করা) প্রবণতায় ঝুঁকে পড়ায় পণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর সুযোগটি কাজে লাগিয়েই সংকট দেখিয়ে পণ্যমূল্য বাড়ায় বিক্রেতারা। তাই ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সচেতন মহল। অর্থাৎ একদিনে পুরো মাসের বাজার না করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া রমজানকে ঘিরে প্রতি বছর পণ্যমূল্য বৃদ্ধির যেন প্রতিযোগিতায় নামেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে বহু পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। অবশ্য দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া চট্টগ্রামে বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতি বছর রমজানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নানাভাবে মনিটরিং করে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। চসিক মেয়র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে পণ্যমূল্য সহনীয় রাখার আহবান জানান। একইসঙ্গে রমজানে বাজারে বিশেষ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান মেয়র।
এছাড়া রমজানে নিরবিচ্ছন্নভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি পেতে চান চান সবাই। নগরে এ চাহিদা সামনে রেখে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, পিডিবি ও চট্টগ্রাম ওয়াসা। এছাড়া রমজানে যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুতি নিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। নিউমার্কেট ও আগ্রাবাদসহ অন্যান্য এলাকা থেকে হকার উচ্ছেদ করায় এবার যানজট কিছুটা কম হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এদিকে আইন শৃক্সখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সিএমপি।
রমজানে পরিবর্তন আসে ব্যাংক, শেয়ারবাজারসহ অন্যান্য অফিস–আদালতের সময়সূচিতেও। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী– রমজানে ব্যাংকে লেনদেন করা যাবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। বর্তমানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত লেনদেন চলে। ওই হিসেবে রমজানে ব্যাংকের লেনদেন সময় কমেছে ৩০ মিনিট।
এছাড়া রমজানে ব্যাংকের অফিস সময়সূচিও পরিবর্তন করা হয়েছে। রমজানে ব্যাংকের অফিস সূচি হবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা চারটা পর্যন্ত। বর্তমানে এ অফিস সূচি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এছাড়া রমজান মাসে দেশের সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অফিস চলবে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এর মধ্যে জোহরের নামাজের জন্য বেলা সোয়া একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে।