ঘরে ঘরে নবান্নের আমেজ

ধান কাটা প্রায় শেষ, এবার কমেছে চাষ ও উৎপাদন, তবে দাম বেশি থাকায় খুশি কৃষক-কৃষাণী

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যমন্ডিত নবান্ন সকলেরই জানা একটি বহুল প্রচলিত উৎসব। অগ্রহায়ণের শেষার্ধে সারাদেশের পাশাপাশি মীরসরাই উপজেলার গ্রামীণ জনপদেও এসেছে নবান্নের আমেজ। কৃষিপ্রধান মীরসরাইয়ের বিভিন্ন গ্রামে এখন নবান্নের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

ভৌগলিকভাবে মীরসরাইয়ের কিছু অঞ্চল একটু নিচু। আবার কিছু অঞ্চলের মাটির স্তর তুলনামূলকভাবে কিছুটা উঁচু। গেল বর্ষায় এই উপজেলায় ভয়াবহ বন্যার কারণে কোন কোন গ্রামে আগাম রোপন করা ধান কোথাও পচে আবার কোথাও জ্বলে গিয়েছিল। কোন কোন এলাকায় কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুনরায় রোপন করেছিলেন। তাদের ধান এখনো মাঠে। উঁচু এলাকাগুলোর যেসব গ্রামে ধান ডুবে যায়নি তাদের ফলন ভালোই হয়েছে। ঘরে ধান উঠতেও শুরু করেছে। বিশেষ করে উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মঘাদিয়া, হাইতকান্দি, সাহেরখালী, খৈয়াছরা ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের অনেক গ্রামে ধান উঠতে শুরু করেছে।

উপজেলার ১১ নং মঘাদিয়া ও ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক মাঠেই প্রায় ৪০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। কেউ ধান আঁটি বেঁধে ঘরে আনতে শুরু করেছে। আবার কেউবা বাড়ির উঠোনে ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত। মঘাদিয়া দাসপাড়া গ্রামে দেখা গেছে কৃষাণকৃষাণীর মুখে অবারিত হাসি। অধিকাংশ বর্গা চাষি হলেও ভাল ফলন পেয়ে ওদের মুখে যেন নবান্নের হাসি আলোকিত করে তুলেছে পুরো ধরণী।

কৃষক প্রিয় নাথ ও কৃষাণী আলো রানী নাথ পরিবারের সবাইকে নিয়ে উঠানে ধান মাড়াই করছিলেন মেশিনের মাধ্যমে। এ সময় কৃষাণী আলো রানী জানান, এবার ৩ কানি জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। যা ধান হয়েছে নিজেদের গোলায় সারা বছরের খাবারের ধান রেখে আরো কয়েকশ আড়ি বিক্রি করা যাবে। এতে কয়েক মাসের জন্য অন্যান্য খরচাও হয়ে যাবে। ৪ গণ্ডা জমিতে আবার চিকন ধানও হয়েছে। যা দিয়ে শীতের পিঠা পায়েসসহ অতিথি আপ্যায়নও হয়ে যাবে।

গ্রামের পাশে ফসলের মাঠে নেমে দেখা যায় কৃষক পিনাক চন্দ্র দাস ও আরেক কৃষাণী। একজন কাটা ধান গুছিয়ে নিচ্ছে আরেকজন তাতে সাহায্য করছে। এ সময় কৃষক পিনাক বলেনদেড় কানি জমি বর্গাচাষ করেছি। যা ধান হয়েছে তার অর্ধেক জমির মালিককে দিয়ে দিব। তবে বাকি ধানে আমার বছরের অর্ধেক চলে যাবে। বাকি দিন এদিকওদিক কাজ করেই চালাতে হবে। সে যাই হোক উপজেলার প্রতিটি ঘরেই এভাবে নবান্ন এসেছে দ্বারে।

উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কারী নুরুল আলম জানান, এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ২২০ হেক্টর। গত বছর থেকে ২৬৫০ হেক্টর আবাদ কমেছে। আবার কিছু ধান দেরিতে রোপণ ও বিপর্যয়ের মুখে পড়ায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। তবুও প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধান এবার উৎপাদন হবার আশাবাদ কৃষি বিভাগের। তবে তবে ধানের দাম গত বছর থেকে একটু বেশি থাকায় কৃষকরা ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারার প্রত্যাশা আছে। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে পুরো উপজেলার প্রায় ২৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুরোপুরি কাটা হয়ে যেতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, এই উপজেলার প্রায় ৬৫ হাজার কৃষক রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রান্তিক কৃষক রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার। আমরা চেষ্টা করছি উপজেলার সকল কৃষককে আমাদের সকল প্রকার সহযোগিতার আওতায় নিয়ে আসতে। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে মীরসরাই উপজেলার সকল কৃষকের মুখেই হাসি ফুটাতে আমরা সক্ষম হবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন রাঙামাটির সবুজ চাকমা
পরবর্তী নিবন্ধচুয়েটে শেষ হল গণিত বিভাগের ৩য় আন্তর্জাতিক কনফারেন্স