দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শোকজ বিদ্ধ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস.এম মামুন মিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তাঁর শোকজের জবাব দিয়েছেন।
২৪ ঘন্টার মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে সম্প্রতি এস এম মামুন মিয়া বলেন, ‘এস আলম গ্রুপের বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিতে সহায়তার যে অভিযোগের বিষয়টাতে আমাকে জড়িয়ে অবতারণা করা হচ্ছে তা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, ঘটনাস্থলের ২৫ কিলোমিটার দূরে থেকেও আমি শোকজের শিকার।’
লিখিত জবাবে এস.এম মামুন মিয়া আরও বলেন, ‘ঘটনাটি একেবারেই আকস্মিক। যা আমাকে রীতিমত বিব্রত করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই, আমার ছাত্র জীবনের রাজনীতি-লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস এবং দলীয় রাজনীতিতে ত্যাগ, অবিচলতা, আনুগত্য, শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষহীন অবস্থানের কথা আমাদের দলের প্রতিটি নেতাকর্মী অবগত। আমার ইন্টিগ্রিটির প্রশ্নে তাঁরা আস্থাশীল বলেও আমি বিশ্বাস করি।’
এছাড়াও গত ৩০ আগষ্ট ‘দৈনিক যুগান্তর আমাকে এবং এস আলম গ্রুপকে নিয়ে যে একটি বিভ্রান্তিকর মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। অথচ এ ধরনের ঘটনার সাথে আমি কোন ভাবেই জড়িত নই।’
‘আমি দীর্ঘদিন বিএনপি’র একজন কর্মী হিসেবে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশ নায়ক তারেক রহমান এর নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে গিয়ে তৎকালীন ফ্যাসিবাদী পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে অগণিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার আসামী হয়েছি।’
শোকজ জবাব সূত্রে জানা গেছে, এস এম মামুন মিয়া পটিয়া উপজেলা ছাত্র দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক থাকাকালীন ৯০ এর স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
দলের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নিজের রাজনৈতিক জীবনে কোন ধরনের অন্যায় এবং অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে কখনোই জড়িত ছিলেন না। কিন্তু সে দিনের সংবাদটি সঠিকভাবে যাচাই না করে অন্য কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করেছেন বলে দাবি তাঁর।
কেননা, গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগষ্ট) রাতে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জ্যারটেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়ে আমার তত্ত্বাবধানে এস আলম গ্রুপের বেশ কিছু গাড়ী বাহির করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেছি বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ ঘটনার সাথে কোন অবস্থাতেই তিনি জড়িত নয়। উপস্থিত ছিলেন না এবং এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তাঁর সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
এমনকি ঘটনাটি নগরীর চাঁন্দগাও থানার অধিভূক্ত। যা বিএনপি নেতা এস এম মামুন মিয়ার এলাকা থেকে আনুমানিক ২৫ কিলোমিটারের দুরত্ব। ঘটনাস্থলের ২৫ কিলোমিটার দুরে থেকেও তিনি ‘গুরুদণ্ড’ কিংবা শোকজের শিকার হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির হাজার হাজার কর্মী সমর্থক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, ‘ওই দিনের ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি কোন ধরনের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সাথে তিনি জড়িত না থেকেও শোকজের মুখে পড়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম মামুন মিয়া।
অন্যদিকে, প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানিয়েছেন, ঘটনার দিন বিএনপি নেতা এস. এম মামুন মিয়া বিকেলে নগরীর টেরিবাজার ও ফিশারিঘাটে ছিলেন। তাঁরপর কাতালগঞ্জ পার্কভিউ হসপিটালে রোগী দেখতে যান। এরপর রাতে বাকলিয়ার একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এরপর সরাসরি গাড়িতে করে বাসায় চলে যান। যার মোবাইল লোকেশন ও ভিডিও ফুটেজে সত্যতা মিলবে বলে নেতাকর্মীদের দাবি।
এছাড়াও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের শোকজ জবাবেও স্পষ্ট ঘটনাস্থলে কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক এস.এম মামুন মিয়া ছিলেন না।
প্রসঙ্গত, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিতে সহায়তার অভিযোগ ওঠায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
এরা হলেন-চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়া। তিন জনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।