ঘটছে দুর্ঘটনা, নজরদারি বাড়ানোর দাবি পর্যটকদের

খাগড়াছড়িতে ফিটনেসবিহীন চারশ চাঁদের গাড়ি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় চার শতাধিক লাইন্সেস ও ফিটনেসবিহীন জীপ বা চাঁদের গাড়ি। এসব গাড়ি চালকের অধিকাংশের নেই কোনো লাইন্সেস। নড়বড়ে গাড়ি স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পাহাড়ি সড়কের প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।

খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু নিচু পাহাড়ি সড়কে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের জন্য অন্তত ষাট বছর আগে খাগড়াছড়িতে চাঁন্দের গাড়ি বা জীপ চলাচল শুরু হয়। বাজার থেকে ইঞ্জিন কিনে স্থানীয় মিস্ত্রীর মাধ্যমে এসব গাড়ি প্রস্তুত করার পর স্থানীয় জীপ সমিতিতে অর্ন্তভুক্ত হয়ে সড়কে চলাচল শুরু করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি সাজেক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠার পর এসব নড়বড়ে গাড়িতে পর্যটকও পরিবহন করা হচ্ছে। প্রয়োজন হয় না ফিটনেস পরীক্ষার। বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই সড়কে দাপিয়ে বেড়ানো এসব চাঁদের গাড়ি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। চলতি বছরে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে চাঁদের গাড়ি দুর্ঘটনায় পর্যটকসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ির পাশাপাশি চালকের বেপরোয়া মনোভাবকেও দায়ি করেছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলী ও জাফর মিয়া বলেন, চাঁদের গাড়ির ড্রাইভারদের কোনো লাইন্সেস নেই। তাদের প্রশিক্ষণ নেই। অনেক চালক নেশা করে গাড়ি চালায়। রাস্তায় ওভার ট্রেকিং করে। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে চাঁদের গাড়িতে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে পর্যটকরা। নারায়ণগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মোহন আহমদ, ফয়সাল জানান, চাঁদের গাড়িগুলো ফিটনেস নেই। আরো বড় ব্যাপার হল ড্রাইভারদের লাইন্সেস নেই। এসব কারণে চাঁদের গাড়িতে ভ্রমণ করতে ভয় লাগছে। চালকদের যদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ভালো হয়।

চালকরা বলছে, সহজেই লাইন্সেস মিলে না। এছাড়া অনেক পরিবহন মালিক অপ্রাপ্ত বয়স্কদের চালক হিসেবে নিয়োগ করে। এতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সবাইকে লাইন্সেসের আওতায় আনলে কমবে দুর্ঘটনা।

খাগড়াছড়ির চাঁদের গাড়ির চালক মো. জসীম, মো. ইয়াসিন ও মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাহাড়ি সড়কে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া পরিবহন মালিক অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গাড়ির চাবি দিয়ে দেয়। এতে করে দুর্ঘটনা ঘটছে। সবাইকে লাইন্সেসের আওতায় আনলে দুর্ঘটনা কমানো যাবে।

দুর্গম পাহাড়ে চাঁদের গাড়ি বা জীপের বিকল্প নেই জানিয়ে সড়ক পরিবহন জীপ মালিক সমিতির নেতারা বলছে, বারবার বিআরটিএতে আবেদন করার পরও গাড়ির ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছি না। আর লাইন্সেস ছাড়া কোনো চালক পর্যটক পরিবহন করতে পারবে না বলে জানান খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন জীপ মালিক সমিতির লাইন সম্পাদক পলাশ দে। তিনি বলেন, আমরা বিআরটিএতে যায়। কিন্ত আমাদের ফিটনেস দিচ্ছে না। সরকারি রাজস্ব যা আসে তা আমরা দিতে রাজি তারপরও আমরা গাড়ির ফিটনেস সনদ ও লাইন্সেস চাই।

তবে স্থানীয়ভাবে তৈরিকৃত এসব গাড়ির ফিটনেস বা লাইন্সেস দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি বিআরটিএ এর মোটরযান পরিদর্শক কায়সার আলম। তিনি বলেন, এসব গাড়ি বহু বছর ধরে চলছে। কিন্ত বিআরটিএ সদর দফতর কর্তৃক অনুমোদন নেই। ফলে এসব গাড়ির কোনভাবেই লাইন্সেস বা ফিটনেস পাওয়ার সুযোগ নেই।

অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেসব গাড়ি অবৈধভাবে চলছে সেসব গাড়ি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি বিষয়টি ট্রাফিক পরিদর্শককে বলব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় দীর্ঘ যানজট, দুর্ভোগ
পরবর্তী নিবন্ধস্বেচ্ছাসেবক দলের দেড়শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা