‘গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ উইক ২০২৫’ হলো উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তাবাদকে উদযাপন করার একটি আন্তর্জাতিক আয়োজন, যা সারা বিশ্বে ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ২০০টিরও বেশি দেশে হাজারো কার্যক্রম, প্রতিযোগিতা ও ইভেন্টের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে কাঠামোগত বাধার মুখোমুখি তরুণদের অনুপ্রাণিত ও সহায়তা করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।
মানুষ এই সপ্তাহে অংশ নিতে পারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে, নিজস্ব আয়োজন করে, অথবা অনলাইন ও সশরীরে কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে। আমরা আজ উদযাপন করছি গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ উইক, একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন যা ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ মানুষকে একত্রিত করে উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করে, সাহসী চিন্তাকে উৎসাহিত করে এবং উদ্যোক্তাবাদের চেতনাকে জাগিয়ে তোলে। এ বছরের থিম ‘টুগেদার উই বিল্ড’। আমি মনে করি এটি একটি শক্তিশালী, সময়োপযোগী ও গভীর অর্থবহ বার্তা বহন করে।
আজ উদ্যোক্তাবাদ আর একক যাত্রা নয়। এটি একটি যৌথ প্রচেষ্টা–যেখানে অংশীদারিত্ব ধারণাকে শক্তিশালী করে, সহযোগিতা অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে এবং একটি অভিন্ন দৃষ্টি স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করে। যখন আমরা একসাথে গড়ে তুলি, তখন আমরা শুধু ব্যবসা সৃষ্টি করি না–আমরা গড়ে তুলি কমিউনিটি, ক্ষমতায়ন করি তরুণ প্রজন্মকে, এবং নির্মাণ করি জাতির ভবিষ্যৎ।
বাংলাদেশ আজ এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মে রয়েছে সৃজনশীলতা, সাহস এবং উদ্ভাবনের অসীম ক্ষমতা । তাদের প্রয়োজন একটি সহায়ক ইকোসিস্টেম–মেন্টর যারা পথ দেখাবে, প্রতিষ্ঠান যারা সমর্থন দেবে, এবং গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ উইকের মতো প্ল্যাটফর্ম যা তাদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করবে। শিল্প, শিক্ষা, আর্থিক খাত, প্রযুক্তি ও সরকার–সব সেক্টর একসঙ্গে কাজ করলে আমরা এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারি এবং উদ্ভাবনকে সফল উদ্যোগে পরিণত করতে পারি।
‘গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ উইক’ উপলক্ষে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এই সপ্তাহটি দক্ষতা বৃদ্ধি, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ অনুসন্ধানের উপযোগী সময়। বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে নারীরা ব্যবসা পরিচালনা, ডিজিটাল মার্কেটিং, আর্থিক পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব–বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। এছাড়া সফল নারী উদ্যোক্তাদের সাথে মতবিনিময়, সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা–সুবিধা সম্পর্কে জানা এবং নতুন উদ্যোগের ধারণা উপস্থাপনের সুযোগও থাকছে। উদ্যোক্তা–ইকোসিস্টেমে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।এই প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণ নারীদের ব্যবসায়িক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্ব দ্রুত বদলাচ্ছে–ডিজিটাল রূপান্তর, এআই এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করছে। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে আমাদের উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিক চিন্তা, প্রযুক্তির প্রতি গ্রহণযোগ্যতা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। একই সাথে, আমাদের লালন করতে হবে মূল্যবোধ–সততা, অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা–যাতে আমরা যে ব্যবসা গড়ে তুলি তা শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, সমাজের কল্যাণেও অবদান রাখে।
‘টুগেদার উই বিল্ড’ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রতিটি সফল উদ্যোক্তার পেছনে রয়েছে সহযোগিতার ভিত্তি–হয়তো কোনো শিক্ষকের পরামর্শ, কোনো মেন্টরের দিকনির্দেশনা, কোনো বিনিয়োগকারীর বিশ্বাস, কিংবা পরিবার–পরিজনের উৎসাহ বা কোনো সফল ব্যক্তির সাকসেস স্টোরি। যখন আমরা হাত মেলাই, একত্র হই, যখন প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ও ব্যক্তিরা একত্রে কাজ করি–তখন উদ্ভাবন হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য– দুর্বার । এই সপ্তাহের উদযাপনে, আসুন আমরা প্রতিশ্রুতি নিই যে আমরা আগামী প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াবো। আমরা তাদের সাহসী স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করবো। আমরা নারী–পুরুষ , যুবসমাজ একসাথে কাজ করে বিভিন্নধর্মী সুযোগ সৃষ্টি করবো, নলেজ এবং আইডিয়া শেয়ারিং করবো এবং সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবো।
সর্বোপরি, আমরা পুরো জনশক্তি একসাথেই গড়ে তুলতে পারি শক্তিশালী অর্থনীতি, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ – অংশীদারত্বমূলক জাতি এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ– এটাই হোক ‘গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ উইক ২০২৫’ এর অঙ্গীকার।
লেখক : অধ্যক্ষ, চিটাগাং আইডিয়্যাল হাই স্কুল এবং পরিচালক, চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।











