গ্রেপ্তার ৮, ক্যাম্পাসে মডেল থানা স্থাপনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি

চবিতে সংঘর্ষ

চবি প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জোবরা গ্রামবাসীর মধ্যে টানা দুই দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে হাটহাজারী থানা পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অজ্ঞাতসহ ১ হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়েরের পর গত মঙ্গলবার রাত ও বুধবার দিনের বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাটহাজারী মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর রুপন বলেন, ২ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে আজ (গতকাল) সাড়ে ১২টার মধ্যে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের জেলা আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনমো. ইমরান হোসেন (৩৫), হাসান প্রকাশ হাসাঈন (২২), রাসেল প্রকাশ ওরফে কালো রাসেল (৩০), মো. আলমগীর (৩৫), মো. নজরুল ইসলাম (৩০), মো. জাহেদ (৩০), মো. আরমান (২৪) ও মো. দিদারুল আলম (৪৬)

এদিকে প্রশাসন ক্যাম্পাসে মডেল থানা স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়ে পত্র দিয়েছে। ছাত্র অধিকার পরিষদ ৭ দফা দাবিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির সিন্ডিকেট সভায় পাসকৃত সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।

মডেল থানা স্থাপনের দাবি : চবি শিক্ষকশিক্ষার্থী, কর্মকর্তাকর্মচারীসহ এলাকাবাসীর নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর মডেল থানা স্থাপনের আবেদন জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ৫৬৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্রটি ইমেইল করা হয়। গতকাল বুধবার চিঠির হার্ডকপি পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী রিয়াজ হারুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, শিক্ষকশিক্ষার্থী, কর্মকর্তাকর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও সংলগ্ন এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক জনগণের বসবাস। এই জনবহুল এলাকায় চুরি, রাহাজানি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, সংঘর্ষসহ সব অপরাধ নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। হাটহাজারী থানার সীমিত জনবল দিয়ে এসব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এজন্যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ থানা প্রতিষ্ঠা করা অত্যাবশ্যক। গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট স্থানীয় এলাকাবাসীর আক্রমণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪২১ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয়ের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশের উপস্থিতি প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, চবির শিক্ষকশিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাকর্মচারীসহ পুরো এলাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে অনতিবিলম্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নতুন মডেল থানা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ৭ দাবি : শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আবাসন ও অধিকার নিশ্চিত করতে চবি ছাত্র অধিকার পরিষদ ৭ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় চাকসু ভবনের গেটে দুপুর ১টার দিকে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

তাদের দাবিগুলো হল. ক্যাম্পাসের সকল ফটক, হল এলাকা, লাইব্রেরি ও রেলগেটের কাছে সিসিটিভি, টহল ও নিরাপত্তা গার্ড মোতায়েন করতে হবে। ২. শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। ৩. নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে হামলার সকল দিক উদঘাটন, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান গ্রহণ ও প্রমাণ যাচাই করতে হবে। ৪. হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৫. প্রশাসনকে তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করে ভবিষ্যতে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা দিতে হবে। ৬. নির্ধারিত সময়ে চাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। ৭. বহিরাগতদের পরিচয় উদঘাটন করে দায়ী ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশ ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

শিবিরের অবস্থান কর্মসূচি : ৫৬৩তম সিন্ডিকেট সভায় পাসকৃত সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে অবস্থান করে এ কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, স্থানীয়দের হামলায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রশাসনকে করতে হবে। এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫ বছরে ২০টি সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রশাসনই কার্যকরী সমাধান করতে পারেনি। আমরা ভেবেছিলাম এই প্রশাসন তা পারবে। কিন্তু তারাও তা পারেনি। সংঘর্ষের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবায়েজিদ থানায় জায়গার সংকট, রাস্তা দখল করে জব্দ গাড়ির স্তূপ
পরবর্তী নিবন্ধফেরারি আসামি নির্বাচনে অযোগ্য, ‘না ভোট’ বাধ্যতামূলক