গ্রেনেড হামলার জঙ্গিদের ঘনিষ্ঠ মামুনুল পাকিস্তানেও ছিলেন

নাশকতার আরও দুই মামলা

| সোমবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জড়িত জঙ্গিদের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন দাবি করে পুলিশ বলছে, তাদের একজনের সঙ্গে প্রায় দেড় মাস পাকিস্তানেও ছিলেন তিনি।
গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ। নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মামুনুল হকের জব্দ করা মোবাইল ফোন থেকে বাবরি মসজিদের নামে কাতার, দুবাই ও পাকিস্তান থেকে টাকা আনার তথ্য-প্রমাণও মিলেছে। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, পুলিশ হেফাজতে সাত দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এই নেতার ‘রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের’ কথাও জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। মামুনুল হেফাজতে ইসলামকে ‘পাকিস্তানের একটি সংগঠনের আদলে’ পরিচালনা করতে চাইছিলেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তিনি রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী ছিলেন। জামায়াতের সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা ভাবনা ছিল তার। এদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে বায়তুল মোকাররম এলাকায় নাশকতার ঘটনায় হেফাজত ইসলামীর যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। দুজন ব্যবসায়ী গতকাল পল্টান থানায় মামলাগুলো করেন বলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অন্য মামলায় কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের এই মামলায় দ্রুতই শোন এরেস্ট দেখানো হবে। অন্যদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কাজ করছে।
মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় হেফাজতের বিক্ষোভ কর্মসূচি ও হরতালকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চলে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানিও হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকার একটি রিসোর্টে ৩ এপ্রিল এক নারীসহ আটকের পর একাধিক বিয়ের ঘটনায় আলোচনায় আসেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল।
গত ১৮ এপ্রিল দুপুরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করার পর মোহাম্মদপুর থানার নাশকতার এক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনুলকে সাত দিন রিমান্ডে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ‘জঙ্গিবাদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার তথ্য’ উঠে এসেছে জানিয়ে উপ-কমিশনার হারুন বলেন, মামুনুলের ভগ্নিপতি মাওলানা মুফতি নেয়ামত উদ্দিন, মাওলানা তাজউদ্দীন ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একবার নেয়ামত উদ্দিন গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তাকে পরে ছাড়িয়ে আনে। এই নেয়ামতের সঙ্গে ২০০৫ সালে পাকিস্তানে গিয়ে ৪৫ দিন ছিলেন মামুনুল। সেখানে বিভিন্ন জঙ্গি ও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তখন যোগাযোগ করেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও ২৪ জন ওই ঘটনায় নিহত হন। পরে তদন্তে জানা যায়, মুফতি আব্দুল হান্নানের জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের কর্মীরা বিদেশি জঙ্গিদের সহযোগিতায় ওই গ্রেনেড হামলা চালায়। আর এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।
সেই মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালতে। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদে তার বিদেশ থেকে অর্থ আনার বিষয়েও তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। দেশের বাইরে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লক্ষ কোটি টাকা এনে তিনি বিভিন্ন মসজিদে-মাদ্রাসায় জঙ্গি, উগ্রবাদী কাজে ব্যবহার করতেন।
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলমও শনিবার জানিয়েছিলেন, হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের তেহেরিক-ই-লাব্বায়িক নামের সংগঠনের আদলে তারা হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশকে গঠন করে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো এদেশকে গড়ে তুলতে চায়। যার পেছনে জামাত-শিবির রয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব বলেন, রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন নামের সংগঠনটি বেশ তৎপর। হেফাজতের উগ্রপন্থি নেতারা এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। কোথাও কোনো ওয়াজ মাহফিল করতে হলে তাদের মাধ্যমে আসতে আয়োজকদের বাধ্য করা হয়।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন’ এর নেতৃত্বে ছিলেন বলে দাবি করেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। নরেন্দ্র মোদীর সফরকেন্দ্রিক বিক্ষোভ থেকে সহিংসতার ঘটনায় সমপ্রতি মামুনুল হকসহ হেফাজতের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার গ্রেপ্তার হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সাবেক সভাপতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিহত শ্রমিকদের পরিবারে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় ইটভাঙার মেশিন খাদে, প্রাণ গেল শ্রমিকের