গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ

রিয়াজুল হক | বুধবার , ৫ জুলাই, ২০২৩ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

মনে করো তুমি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড থেকে ক্রুজ শিপে চড়ে প্রশান্ত মহাসাগরে ভ্রমণ করছো। উপকূল থেকে কিছু দূর গেলেই দেখতে পাবে সারি সারি কোরাল রিফ। অস্ট্রেলিয়ার এই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ হচ্ছে প্রবাল দিয়ে তৈরি বিশাল এক প্রাচীর। জানো তো বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপও কিন্তু প্রবাল দিয়ে গঠিত।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রবাল প্রাচীর। কুইন্সল্যান্ড উপকূল বরাবর কোরাল সাগরে ২ হাজার ৯০০টিরও বেশি একক রিফ এবং ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে এটি গঠিত। তোমরা জেনে অবাক হবে যে মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর যা কিছু দেখা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ।

তোমরা কি বলতে পারো কতটুকু এলাকা জুড়ে এর বিস্তৃতি? উত্তরপশ্চিম থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকে লম্বালম্বি এই রিফের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার। আর প্রস্থ কোনো কোনো জায়গায় ৬০ কিলোমিটার এবং অন্য কোথাও হয়তো ২৫০ কিলোমিটার। কুইন্সল্যান্ড সমুদ্র উপকূল থেকে অবস্থান ভেদে প্রায় ১৬ থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে এই রিফ অবস্থিত এবং প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এর অবস্থান। সত্যি অবাক হচ্ছো তাই না? কী বিশাল এলাকা জুড়ে এর বিস্তৃতি? অবাক হওয়ারই কথা।

এই রিফ তৈরি হয়েছে ধীরে ধীরে মৃত প্রবাল কীট জমে। প্রবাল কীটগুলো পলিপ হিসেবে পরিচিত। পলিপগুলো সিলিন্ডার আকৃতির, অনেকটা ফুলদানির মতো। তোমাদের কি জানতে ইচ্ছে করে কতো বছর আগে এই রিফ তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে? শুনে অবাক হবে যে লক্ষ লক্ষ বছর আগে এই রিফ তৈরি হওয়া শুরু হয়। মনে করা হয় যে জীবিত কোনো প্রাণী দিয়ে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ স্থাপনা হচ্ছে এটি। প্রবাল কীট মারা যাওয়ার পর যে চুন পড়ে থাকে সেগুলো ধীরে ধীরে জমে এই রিফ তৈরি হয়েছে। রিফের পানি স্ফটিকস্বচ্ছ এবং সমুদ্রের নিচে প্রায় ৩০ মিটার গভীরতায় সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখা যায়। তোমাদের এখন রিফে গিয়ে কাচের পাটাতনযুক্ত বোটে চড়ে রিফের প্রবাল এবং অন্যান্য প্রাণী দেখতে ইচ্ছে করছে তাই না?

চলো আমরা কল্পনায় না হয় একটু ঘুরে আসি রিফে। তোমাদের কি জানতে ইচ্ছে করে এখানে কোন কোন ধরনের প্রাণী বসবাস করে? তাহলে জেনে রাখো। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির শক্ত প্রবালের পাশাপাশি অ্যানিমোন (নরম দেহের ফুলের মতো দেখতে চলৎ শক্তিহীন সামুদ্রিক প্রাণী), স্পঞ্জ, কেঁচোর মতো দেখতে প্রাণী, গ্যাস্ট্রোপড, লবস্টার, ক্রেফিশ, চিংড়ি এবং কাঁকড়া বসবাস করে। এছাড়াও ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি প্রজাতির মাছ এবং অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণী বাস করে এখানে। কিছু সাধারণ মাছের মধ্যে রয়েছে ওরাস, ড্যামসেলফিশ, ট্রিগারফিশ এবং অ্যাঞ্জেলফিশ। আর বড় প্রজাতির মধ্যে রয়েছে রে এবং হাঙর। প্রাচীরটি জানা সাতটি সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রজাতির মধ্যে ছয়টি, এক ডজনেরও বেশি সামুদ্রিক সাপ এবং প্রায় দুই ডজন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। এছাড়াও লাল শৈবাল লিথোথামনিয়ন এবং পোরোলিথন ঘেরা বেগুনি লাল শৈবালের রিম বা বৃত্তাকার গঠন এই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাছাড়াও হালিমেদা নামের সবুজ শৈবাল এই রিফের প্রায় সব জায়গাতেই দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠের উপরে উদ্ভিদের সংখ্যা খুবই কম, মাত্র ৩০ থেকে ৪০টি প্রজাতি হবে হয়তো। কয়েক জাতের ম্যানগ্রোভও রয়েছে উত্তরের অংশে।

এই রিফের প্রধান শত্রু কে জানো? সেটি হচ্ছে একটি মাছ, ক্রাউনঅফথর্নস স্টারফিশ। এই মাছটি জীবন্ত প্রবালের বেশির ভাগ খেয়ে কেন্দ্রীয় প্রাচীরের রঙ এবং আকর্ষণ কমিয়ে দিয়েছে। মানুষও কিন্তু এই রিফের আরেক শত্রু কারণ মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে রিফের ক্ষয় বেড়ে গেছে।

অস্ট্রেলিয়া যেমন ক্যাঙ্গারুর দেশ হিসেবে পরিচিত তেমনি গ্রেট ব্যারিয়ার রিফএর জন্যও পরিচিত। এই রিফটি এখন অন্যতম পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। তোমাদের কখনও সুযোগ হলে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ দেখে আসতে পারো। চাইলে স্কুবা ডাইভিংও করতে পারো সেখানে। তবে স্কুবা ডাইভিং করতে হলে বিশেষ পোশাক পরতে হবে যাতে জেলি ফিশ তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। আরও মনে রাখতে হবে পরিবেশ দূষণ করা যাবে না। এমনিতে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রিফের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তবে খুশির কথা হচ্ছে এই রিফের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ মেরিন পার্ক কর্তৃপক্ষ। তারা এই রিফের দেখভাল করে এবং কেউ যাতে ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে নজর রাখে। ইকো ট্যুরিজম প্রসারে তারা খুবই সতর্ক। আর হ্যাঁ, ১৯৮১ সালে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি আসে
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে হত্যা মামলার দুই আসামি গ্রেপ্তার