ম্যাচটা ছিল বাঁচা মরার। সে ম্যাচে জয়ের মত পুঁজিও সংগ্রহ করেছিল ব্যাটাররা। কিন্তু বোলাররা সে ১৮৪ রানের পুঁজিকেও যথেষ্ট বানাতে পারল না। ফলে একেবারে তীরে এসে তরী ডুবিয়ে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশকে। শ্রীলংকার কাছে ম্যাচটি হেরেছে ২ উইকেটে। অথচ কি দারুই ব্যাটিংটাইনা করেছিলেন ব্যাটাররা। প্রথম ম্যাচে আফগান মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটার হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। আর এবার শ্রীলংকার পেল এন্ডাররা হারিয়ে দিল টাইগারদের। ফলে একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে দেশে সাকিবদের। আগেরদিন বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর ক্রিকেটারদের এপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অথচ পরদিন মাঠে দারুণই পারফর্ম করলেন ব্যাটাররা। টি-টোয়েন্টি আদলেই যেন খেলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লংকানদের সাথে আর পেরে উঠল না সাকিবের দল বোলারদের ব্যর্থতায়। মাত্র একটি জয়ে শ্রীলংকা পৌঁছে গেল সুপার ফোর পর্বে। এই গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে আফগানিস্তান। আর তালিকার দুই নম্বরে থেকে গেল শ্রীলংকা। বাঁচা মরার লড়াইয়ে স্নায়ুচাপকে জয় করে ম্যাচটা জিতে নিল লংকানরা। কয়দিন আগে এই ম্যাচকে ঘিরে চলছিল কথার লড়াই। দুই দলেরই লক্ষ্য ছিল মাঠে দেখিয়ে দেওয়ার। শেষ পর্যন্ত সেটা পারল না বাংলাদেশ। দেখিয়ে দিল শ্রীলংকা।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনেছিল। আগের ম্যাচের দুই ওপেনার এনামুল এবং নাঈশ শেখ ছিলেন না এই ম্যাচে। তাই তাদের জায়গায় ইনিংস শুরু করতে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং সাব্বির রহমান। কিন্তু লাভ হয়নি ওপেনিংয়ে পরিবর্তন এনেও। ১৯ রানে ভাঙ্গে উদ্বোধনী জুটি। প্রায় তিন বছর পর দলে সুযোগ পাওয়া সাব্বির পারেননি সুযোগটাকে কাজে লাগাতে। ফিরেছেন ৫ রান করে। মিরাজ এবং সাকিব মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৯ রান যোগ করেছিলেন। ডি সিলভার বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ২৬ বলে ২টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৩৮ রান করে আসেন মিরাজ। প্রথম ম্যাচের মত এই ম্যাচেও ব্যর্থ হলেন মুশফিক। প্রথম ম্যাচে ১ রান করা মুশফিক এই ম্যাচে করলেন ৪ রান। শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকা সাকিবও পারলেন না দলকে টানতে। প্রথম ম্যাচে ৯ বলে ১১ রান করা সাকিব এই ম্যাচে করেন ২২ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ২৪ রান। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৫৫ রান করা বাংলাদেশ ১০ ওভারে করে ৩ উইকেটে ৮৫ রান। মাহমুদউল্লাহ এবং আফিফ মিলে ভালই এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। ৫৭ রানের জুটি গড়েন দুজন। মাধুশানকাকে ছক্কা মারতে গিয়ে ফিরেন আফিফ। ২২ বলে ৪টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৩৯ রান করেন আফিফ। পরের ওভারে ফিরেন মাহমুদউল্লাহও। আগের ম্যাচে ২৫ রান মাহমুদউল্লাহ এই ম্যাচে খেলেছন ২২ বলে ২৭ রান। শেষ দিকে মোসাদ্দেকের ঝড়ে বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ১৮৩ রানে। আগের ম্যাচে ৩১ বলে ৪৮ রান করা মোসাদ্দেক গতকাল করেছেন ৯ বলে ২৪ রান। ৬ বলে ১১ রান করেন তাসকিন।
১৮৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা বেশ ঝড়ের বেগে করেছিল দুই লংকান ওপেনার নিশাংকা এবং কুশল মেন্ডিস। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে বল করতে এসে এ জুটি ভাঙ্গেন অভিষেক ম্যাচে খেলতে নামা এবাদত হোসেন। নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ফেরান ২০ রান করা নিশাংকাকে। ওভারের শেষ বলে আবার আঘাত এবাদতের। এবার তার শিকার আশালাঙ্কা। পরের ওভারে ফিরতে পারতেন কুশল মেন্ডিসও। কিন্তু মেহেদী হাসানের করা বলটি নো বল হওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যান মেন্ডিস। নিজের পরের ওভারে আবার আঘাত এবাদতের। এবার তার শিকার গুনতিলকা। এক বল পর ফিরতে পারতেন কুশল মেন্ডিস। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি কট বিহাইন্ডের আবেদনে। তবে রিভিও নিলে উইকেটটি পেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু রিভিউ নিলেন না সাকিব। অবশ্য পরের ওভারে বল করতে এসে তাসকিন ফিরিয়েছেন রাজাপাকশেকে। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে মোস্তাফিজ থামিয়েছেন দুবার জীবন পাওয়া কুশর মেন্ডিসকে। ফেরার আগে ৩৭ বলে ৬০ রানের ঝড় তুলে আসেন এই লংকান ওপেনার। পরের ওভারে তাসকিন ফেরান হাসারাংকাকে। কিন্তু ঝড় তুলছিলেন দাশুন সানাকা। বাংলাদেশের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠা সানাকাকে ফেরান মেহেদী হাসান। মোসাদ্দেকের হাতে সীমানার কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে সানাকা করেন ৩৩ বলে ৪৫ রান। শেষ পর্যন্ত করুনারত্নে এবং আশিথা ফার্নান্ডো মিলে তিন বল হাতে রেখে দুই উইকেটের জয় নিয়ে সুপার ফোর পর্বে চলে যায় শ্রীলংকা। আর বাংলাদেশকে ফিরতে হলো প্রথম রাউন্ড থেকে। করুনারত্নে ১৬ আর ফান্র্ান্ডো ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন।