গ্রাহকের ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ব্যাংক কর্মকর্তার ৩১ বছরের কারাদণ্ড

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৬ জুলাই, ২০২৩ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

এফডিআর খোলার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে কৌশলে কয়েকটি চেক স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরবর্তীতে ট্রান্সফার ফরমে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে গ্রাহকের ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ সংক্রান্ত দুদকের একটি মামলার রায়ে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি তাকে ৫২ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা হলেন মো. ইফতেখারুল কবির। তিনি ইস্টার্ন ব্যাংক চান্দগাঁও শাখার সাবেক প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার এবং নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার দারোগাহাট রোডের আলমগীর কবিরের ছেলে। গতকাল চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ এই রায় ঘোষণা করেন। এ সময় ইফতেখারুলের চার সহযোগীকেও বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তারা হলেন, ইস্টার্ন ব্যাংক চান্দগাঁও শাখার আরেক সাবেক প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার সামিউল সাহেদ চৌধুরী, লাবিবা ট্রেডিং নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন, জুলেখা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আবদুল মাবুদ ও মাহমুদুল হাসান নামের অপর একজন। এরমধ্যে জাকির হোসেন ও মাহমুদুল হাসানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং আবদুল মাবুদ ও সামিউল সাহেদ চৌধুরীকে ৬ বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার সময় তারা প্রত্যেকে কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে গত ২৩ জুন ইস্টার্ন ব্যাংক চান্দগাঁও শাখার অপর এক গ্রাহকের এফডিআরের টাকা আত্মসাতের দায়ে ইফতেখারুলকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একটি ধারায় মো. ইফতেখারুল কবিরকে ৩১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড, ৫০ লাখ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড, ৪২০ ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ড, ৪৬৭ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ড, ৪৭১ ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ড, ৪৭৭এ ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ড এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫() ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পিপি বলেন, ইফতেখারুলের চার সহযোগীকেও দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একটি ধারায় বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পিপি কাজী ছানোয়ার আহমদে লাভলু বলেন, আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত হওয়ায় পাঁচজন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আদালতসূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গ্রাহক আবু সাঈদের টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি দুদকের সিডিউলভুক্ত হওয়ায় দুদক ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজহারে বলা হয়, গ্রাহক আবু সাঈদের হিসাব থেকে বিভিন্ন অংকের এফডিআর খোলার সময় আসামি ইফতেখারুল কবির কৌশলে এফডিআর খোলার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আবু সাঈদের কাছ থেকে কয়েকটি চেকে স্বাক্ষর করে নেন। পরবর্তীতে আবু সাঈদের কাছ থেকে আগে থেকে রেখে দেয়া চেকের মাধ্যমে ও একাউন্টে ট্রান্সফার ফরমে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় আবু সাঈদের ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল ব্যাংকের তদন্ত কমিটির কাছে ঘটনার বিষয়ে লিখিতভাবে দোষ স্বীকার করেন ইফতেখারুল কবির বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়। আদালতসূত্র জানায়, তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ব্যাংক কর্মকর্তা ইফতেখারুল কবিরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে পরের বছরের ১১ মে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাসা থেকে বেরুনোর পরদিন পাওয়া গেল লাশ
পরবর্তী নিবন্ধদেশে সংকট নেই, বিএনপিতে সংকট ঘণীভূত হচ্ছে : তথ্যমন্ত্রী