গ্রামীণ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্য

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | শনিবার , ১২ অক্টোবর, ২০২৪ at ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

দেশের গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের নিত্য ব্যবহারিক পণ্যের মধ্যে বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র বিশাল একটি স্থান দখল করে আছে। গ্রামীণ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী এসব জিনিসপত্র। দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজে আবহমান কাল থেকে বাঁশ ও বেতের ব্যবহার চলে আসছে। এছাড়া নিজেদের ঘর সাজাতেও ব্যবহার হয় এই বাঁশ ও বেতের তৈরী পণ্য। সৌন্দর্য ও টেকসইয়ের দিক থেকেও এগুলো সেরা।

বর্তমানে দেশে প্লাস্টিক জাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও কোন অংশে কমেনি বাঁশ ও বেতের তৈরী পণ্যের। বিভিন্ন মেলা ও গ্রামীণ হাটবাজারে বিক্রি করতে দেখা যায় বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ও বেতের পণ্য যেমন লাই, চালন, কুলা, মই, খাঁচা, মুরগি পালনের ঝাপা, মাটি কাটার ঝুঁড়ি, মাছ ধরার কয়েক প্রকারের চাই (ফাঁদ), ঝুঁড়ি, ডালা, পলো, ডুলা ইত্যাদি।

দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় এ গৃহস্থালী কাজের উপকরণ বাঁশের তৈরী জিনিসপত্র তৈরী ও বিক্রির সাথে জড়িত হয়ে অনেকেই সংসারের হাল ধরেছেন। তাদেরই একজন চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভাধীন দেওয়ানহাট এলাকার মোঃ নাজিম উদ্দীন (৩০)। পিতার কাছ থেকে ১০ বছর বয়স থেকে বাঁশের জিনিসপত্র তৈরীর কলাকৌশল শিখে এ কাজে মনোনিবেশ করার কারণে বেশিদূর লেখাপড়াও করা হয়নি তার। সবেমাত্র অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। বর্তমানে বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র তৈরী ও বিক্রি করে সুন্দরভাবে চলছে তার সংসার। নাজিম উদ্দীন দেওয়ানহাট এলাকার এয়াকুব ড্রাইভার বাড়ির গোলাম নবীর ছেলে। প্রায় ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে দোহাজারী পৌরসদরে বাঁশ ও বেতেরে হরেক রকম নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে আসছে সে। তার পূর্ব পুরুষরা এ পেশায় জড়িত ছিল। সে তার পিতার কাছ থেকে বাঁশের জিনিসপত্র তৈরীর কলাকৌশল শেখে। নাজিম জানায়, ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কোন কাজই করা যায়। অভাবের সংসার হওয়ায় লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। পিতার কাছ থেকে কলাকৌশল শেখার পর এ পেশাকেই আগলে রেখেছে বিগত ২০ বছর ধরে। বাঁশ দিয়ে সে ১০ থেকে ১২ প্রকারের জিনিসপত্র তৈরী করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাই, চালন, কুলা, মই, খাঁচা, মুরগি পালনের ঝাপা, মাটি কাটার ঝুঁড়ি, মাছ ধরার কয়েক প্রকারের চাই (ফাঁদ) ইত্যাদি। এছাড়া সে চাটাইও তৈরী করে। তার তৈরীকৃত জিনিসপত্রের মধ্যে শুস্ক মৌসুমে মাটি কাটার ঝুঁড়ি (পেরগোয়া), বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার চাই (ফাঁদ), শীতকালে চাটাইয়ের কদর থাকে বেশি। আর অন্যান্য জিনিসপত্রের কদর সারা বছরই থাকে। তার তৈরীকৃত বাঁশ শিল্পের মধ্যে মাছ ধরার চাই (ফাঁদ) প্রকারভেদে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, প্রতিজোড়া লাই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, খাঁচা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, মুরগি পালনের ঝাপা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, মাটি কাঁটার ঝুঁড়ি প্রকারভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, চাষের মই ৫০০ টাকা, চাটাই ২০০ টাকা, চালন ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। সে জানায় এসব জিনিসপত্র সে বাড়িতেই পাইকারী হিসেবে বেশি বিক্রি করে।

পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহের শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার দোহাজারী বাজারে, শুক্রবার ও সোমবার বাগিচাহাট বাজারে এবং বুধবার গাছবাড়িয়া খানহাটে তার তৈরীকৃত এসব পণ্য বিক্রি করে। সে আরো জানায়, তার তৈরীকৃত এসব পণ্যের প্রধান কাঁচামাল বাঁশ সংগ্রহ করে সাতকানিয়ার কেরানীহাট, বেত সংগ্রহ করে লোহাগাড়ার আমিরাবাদের দরবেশ হাট এবং অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করে বিভিন্ন পাচারী দোকান থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাহাজভাঙা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের দাবি
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে শপিং সেন্টারে আগুন