গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের কর্তৃত্ব কমানোর প্রস্তাব অনুমোদন, অধ্যাদেশ আসছে

| শুক্রবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

শান্তিতে নোবেলজয়ী ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর সরকারের কর্তৃত্ব কমিয়ে গ্রাহক বা উপকারভোগীর ক্ষমতা বাড়াতে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে অধ্যাদেশ আকারে জারি করলেই গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা কাঠামো ও কর্তৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এই ব্যাংকে সরকারের অংশীদারত্ব ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। বাকি ৯০ শতাংশ থাকবে উপকারভোগীদের হাতে। অধ্যাদেশ জারি হলে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকটির কর্তৃত্ব চলে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে। খবর বিডিনিউজের।

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তগুলো ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আগে গ্রামীণ ব্যাংক একটা মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করতো। যারা গ্রামীণ ব্যাংকের উপকারভোগী, তাদের এই ব্যাংক পরিচালনায় ভূমিকা ছিল। কিন্তু বিগত সময়ে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে রাজনৈতিকভাবে টার্গেট করা হয়েছিল এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানায় তার সেই দর্শন থেকে সরিয়ে অনেকাংশে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। আজকের অধ্যাদেশটা সংশোধনের ফলে যেটা দাঁড়াল, তা হচ্ছে, পরিশোধিত মূলধন আগে ছিল সরকার ২৫ শতাংশ আর উপকারভোগীরা ৭৫ শতাংশ। এখন সরকার থাকবে ১০ শতাংশ আর উপকারভোগীরা ৯০ শতাংশ। উপদেষ্টা বলেন, আগে গ্রামীণ ব্যাংক কেবল ভূমিহীনদের জন্য কাজ করত। এখন বিত্তহীনদের একটি সংজ্ঞা সংযোজন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পরিসর থেকে বের করে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিচালনা বোর্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যারা উপকারভোগী তাদের মধ্য থেকে নয়জন নির্বাচিত হয়ে আসবেন। সেই নয়জনের মধ্য থেকে আবার তিনজন মনোনীত হবেন। তাদের মধ্যে থেকেই একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন। অধ্যাদেশে গ্রামীণ ব্যাংককে জনস্বার্থ সংস্থা হিসাবে বিবেচনা করার বিধান আনা হয়েছে।

দেশের প্রান্তিক ও দারিদ্র্য পীড়িত জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের জন্য জামানত ছাড়া ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের উদ্দেশ্যে ১৯৮৩ সালে ‘গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ’ এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক গঠন করা হয়। পরে অধ্যাদেশটি বাতিল করে ২০১৩ সালে ‘গ্রামীণ ব্যাংক আইন’ প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনেই এতদিন ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছিল।

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ ২৮ বছর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের চেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। অধ্যাদেশ জারি হলে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০০ কোটি টাকা। ঋণগ্রহীতারা ধীরে ধীরে মূলধনে অবদান বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ মালিকানা অর্জন করবেন। বোর্ড ঘোষিত যে কোনো লভ্যাংশ মূলধনের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে বিতরণ করা হবে।

আইন সংশোধনের ফলে চেয়ারম্যান নিয়োগে সরকারের ভূমিকাও আর থাকবে না। চেয়ারম্যান নিয়োগ হবে পর্ষদের সদস্যদের ভোটে। ১২ সদস্যর পর্ষদের ১১ জনই ব্যাংকের গ্রাহকদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। চেয়ারম্যানের ক্ষমতা কমবে, সেই ক্ষমতা যাবে পর্ষদের হাতে। পর্ষদ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেবে বাছাই কমিটির মাধ্যমে। অধ্যাদেশের বিধি তৈরিসহ উদ্ভূত কোনো সমস্যায় সরকারের পরিবর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদকে।

গ্রামীণ ব্যাংক পল্লী এলাকার পাশাপাশি সারা দেশে শহর এলাকাতেও যাতে শাখা খুলতে পারে সেই সুযোগ রাখা হয়েছে অনুমোদিত খসড়ায়। এখন ব্যাংকের শাখা খুলতে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। অধ্যাদেশ জারি হলে সেই অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে শত কোটি টাকার সরকারি জমি উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধটেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার