গ্যাস সংকট নিরসনে নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

| মঙ্গলবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

অনবরত নেতিবাচক সংবাদ শুনতে শুনতে খানিকটা আনন্দ সংবাদ দিয়েছে আজাদী। গত ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘চট্টগ্রামে গ্যাস সেক্টরে স্বস্তি’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, শীতের প্রকোপ শুরু হওয়ার পাশাপাশি গ্যাসের যোগান বাড়ায় চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টরে কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করছে। চলতি মাসে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রামের গ্যাস ব্যবহারকারী বৃহৎ ইউনিট সিইউএফএল বন্ধ থাকায় বেশ কিছু গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে।

সংবাদে বলা হয়, চট্টগ্রামের গ্যাসের একটি বড় অংশ আমদানিকৃত এলএনজি নির্ভর। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামে চাহিদার অর্ধেকের সামান্য বেশি গ্যাস দেয়া হচ্ছিল। বিদেশ থেকে গ্যাস না আসায় সংকট বেশ প্রকট হয়ে উঠে। আকালের মাঝে সিইউএফএল এবং কাফকো একই সাথে উৎপাদনে থাকায় এক তৃতীয়াংশেরও বেশি গ্যাস ব্যবহার করছিল তারা।

এতে করে চট্টগ্রামের শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক মিলে সবগুলো চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল। চট্টগ্রামে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ২৫০ থেকে ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছিল। ফলে চারদিকে গ্যাসের হাহাকার তৈরি হয়। অনেক জায়গায় রান্নাঘরের চুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনির্দিষ্টকালের সিইউএফএল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৪০ মিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশি গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে।

এই গ্যাস দেয়া হচ্ছে ন্যাশনাল গ্রিডে। এর বাইরে শীতের প্রকোপ আস্তে আস্তে শুরু হওয়ায় বিদ্যুতের উপর চাপ কমতে শুরু করেছে। এতে করে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস দেয়া সম্ভব না হলেও খুব বেশি প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বর্তমানে মাত্র ৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে চলতি মাসে গ্যাস আমদানি বেড়েছে। বিদেশ থেকে এ মাসে পাঁচ কার্গো এলএনজি আসছে। ফলে গ্যাসের যোগান কিছুটা স্বাভাবিক থাকবে। তবে আগামী মাসে এলএনজি আমদানি আবারো চার কার্গোতে নেমে আসতে পারে। তবে শীতের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় এর প্রভাবও খুব বেশি পরিলক্ষিত হবে না।

কিছুটা স্বস্তি দেখা দিলেও গ্যাস সংকট থাকছেই। বলতে গেলে দেশে চলমান গ্যাস সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে উৎপাদন ব্যবস্থা। র‌্যাশনিং করা হচ্ছে সিএনজি স্টেশনগুলোতে। আমদানি করা এলএনজিতে মিটছে না চাহিদা। এ অবস্থায় দেশের প্রচলিত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। এর অংশ হিসেবে সিলেট অঞ্চলের ক্ষেত্রগুলোতে খনন করা হচ্ছে নতুন নতুন কূপ। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্ষেত্র ও কূপগুলোয় আরও গভীরে গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ কাজে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে কাজে লাগাতে চায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

গ্যাসকে বলা হয়ে থাকে বর্তমান সভ্যতার প্রধান জ্বালানি। গ্যাসের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে আধুনিক অর্থনীতি এবং শিল্প-কারখানা। মাটির নিচে খনিতে পাওয়া এ গ্যাস বর্তমান সভ্যতার প্রধান চালিকাশক্তি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রান্নায় গ্যাসের ব্যবহার এলপি গ্যাস দিয়ে সমাধান করা গেলেও, কল-কারখানার গ্যাসের চাহিদা কিন্তু লাইনের গ্যাস ছাড়া পূরণ হবে না। এর সমাধানে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য গ্যাসের অনুসন্ধান এবং গ্যাসের উত্তোলন বাড়াতে হবে। তাঁরা বলেন, গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ্যাসের এ ঘাটতি মেটাতে আমরা বিদেশ থেকে এলএনজি (লিকুুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানি করছি। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান নয়। দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস সংকটের সমাধান করতে হলে নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করতে হবে, আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে হবে এবং উত্তোলিত গ্যাস তার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। এজন্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে এবং বাপেক্সকে আরো গতিশীল করতে হবে। গ্যাস সেক্টরে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে এবং সময়ে সময়ে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে