কয়েক সপ্তাহ পর শুরু হচ্ছে রমজান। রমজানকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেবা খাতগুলোর কোথাও সমস্যা হবে না বলে দাবি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এদিকে নগরীর যানজট পরিস্থিতি সামাল দিতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাতে সংকট তৈরি না করে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ প্রশাসন এব্ং দ্রব্যমূল্য সহনীয় ও ভেজাল প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। শুধু বাজার মনিটরিং নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণেও নেওয়া হবে বিশেষ পদক্ষেপ। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাও বাজারের ওপর নজরদারি করবে।
গ্যাস সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছুদিন আগে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাসনির্ভর কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। কমে গিয়েছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন। বাড়ে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট। রান্নারও সমস্যা হয়। তবে এবার রমজানে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, এলএনজি সরবরাহ প্রচুর। গতকাল প্রায় ৭শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। এতে করে কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে না। গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পুরোদমে উৎপাদন চালাবে। এলএনজি সরবরাহে গতি আসায় চট্টগ্রামে গ্যাসের অভাব থাকবে না বলে জানিয়েছেন কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সারওয়ার হোসেন। তিনি আজাদীকে বলেন, রমজানে কোথাও গ্যাসের যাতে সমস্যা না হয় সেদিকে এমডি মহোদয়সহ শীর্ষ কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক সজাগ রয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা বৈঠক করেছি। টিম গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুতের পরিস্থিতি সন্তোষজনক উল্ল্লেখ করে পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে কোনো লোডশেডিং নেই। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। কাজের সুবিধার জন্য মাঝেমধ্যে লাইন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। রোজার মধ্যে এসব উন্নয়ন কাজ করার সময় বাড়তি খেয়াল রাখা হবে; যাতে কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট না হয়।
তিনি বলেন, রমজানে ইফতার, সেহেরি ও তারাবিতে বিদ্যুতের প্রয়োজন বেশি। ওই সময়গুলোতে যাতে কোনো সংকট না হয় সেদিকে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকব।
চট্টগ্রামে পানির অভাব নেই জানিয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, পানির উৎপাদন বেড়েছে। লাইন বেড়েছে। লাইন সংস্কার করেছি। নতুন একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ট্রায়াল রান চলছে। পানি উদ্বৃত্ত হবে। কোথাও অভাব থাকবে না।
ডিপ টিউবওয়েলগুলো ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধিকাংশ টিউবওয়েল বন্ধ করে দিয়েছি। যে ক’টি চালু আছে তা-ও শুধু চালু রাখার জন্য মাঝেমধ্যে চালাই। তিনি বলেন, আমরা বৈঠক করে টিম ঠিক করেছি। পানির গাড়িগুলো সচল করছি, যাতে কোথাও সমস্যা হলে সাথে সাথে গাড়িতে পানি পাঠাতে পারি।
তিনি জানান, যেসব এলাকায় পানি নেই সেখানে ভাউজারের মাধ্যমে পানি দেব। রমজানে ইফতার ও সেহেরিতে মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয় তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, শুধু বাজার মনিটরিং নয়, নিয়ন্ত্রণও করব।
সিএমপির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, রমজানে যাতে রাস্তায় যানজট না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। আগ্রাবাদ থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত চলছে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ। কাজের প্রভাবে ইপিজেড ও বন্দরসহ সন্নিহিত অঞ্চলে যাতে যানজট প্রকট না হয় সেদিকে সজাগ থাকবে ট্রাফিক বিভাগ। ইতোমধ্যে এঙপ্রেসওয়ের আগ্রাবাদ অংশে রাস্তার উপর দেওয়া ঘেরা খুলে ফেলার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। রমজানের আগে এই ঘেরা সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।












