গ্যাসের ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন কাজ শুরু হচ্ছে আজ

২৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কেজিডিসিএল ।। প্রতিদিন স্থাপন করা হবে আড়াইশর বেশি মিটার ।। আবাসিক খাতে কমবে গ্যাসের খরচ ও অপচয়

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে আজ শুরু হচ্ছে নগরীতে গ্যাসের এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ। নগরীর হালিশহর আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) ২৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ইতোপূর্বে স্থাপিত ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটারের সুফল পাওয়ার পর নগরীর হাজার হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন। জাপান থেকে মিটারসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম আনার পর আজ মিটার বসানোর কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রতিদিন গড়ে আড়াইশরও বেশি মিটার স্থাপন সম্ভব হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, গ্যাস সেক্টরের আবাসিক খাতে গ্যাস চুরি, অবৈধ এবং চোরা সংযোগ বন্ধ এবং সর্বোপরি অপচয় ঠেকাতে সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামের গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় বছর দশেক আগে। আমলতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে গ্যাস লাইনে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখে। ২০১৮ সালে নগরীতে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছিল। বছর দেড়েক সময়ের মধ্যে নগরীর জামালখান, হালিশহর, চান্দগাঁও, কোতোয়ালী, খুলশী, নাসিরাবাদ, লালখান বাজার, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকার ৬০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়। জাপান সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহায়তায় এসব মিটার স্থাপন করা হয়। কর্ণফুলী গ্যাসের প্রায় ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহকের মাঝে প্রথম দফায় ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেয়া হলে বেশ সাড়া পড়ে। জাপান থেকে আনা উন্নতমানের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর নগরীর আবাসিক খাতে গ্যাসের খরচ বহুলাংশে কমে যায়। কমে যায় গ্যাসের অপচয়। এক চুলা কিংবা দুই চুলা হিসেবে নির্দিষ্ট হারে যে বিল গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়, তার থেকে অনেক কমে পুরো মাসের রান্নার কাজ সেরে যাওয়ায় প্রিপেইড সিস্টেম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এতে চট্টগ্রামে গ্যাস খাতে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে বলে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, চুলা না জ্বালালে কোনো বিল আসে না। আবার নিজেরাও ইচ্ছে করলে বিল সাশ্রয় করতে পারছে। পোস্টপেইড চুলা থেকে প্রিপেইড মিটারে খরচ প্রায় অর্ধেক হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকেরা এই সিস্টেমের আওতায় আসার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে।

গ্রাহকদের ব্যাপক আগ্রহের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য পৃথক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২৪১ কোটিরও বেশি টাকার একটি প্রকল্পটির নানা প্রক্রিয়া শেষ করে আজ থেকে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু করা হচ্ছে। জাপানের টয়োকিকি কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করবে। গ্রাহকদের বাসাবাড়ির লাইনগুলো প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উপযোগী হলেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাইজারে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করে দেয়া হবে। এ জন্য কোনো ফি বা টাকা নেয়া হবে না। তবে লাইন ঠিক না থাকলে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা সম্ভব হবে না। রাইজার থেকে রান্নাঘরের চুলা পর্যন্ত গ্রাহক নিজ খরচে লাইন ঠিক করে নেয়ার পরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে রাইজার থেকে চুলা পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন থাকতে হবে। অনেক বাড়িতে রাইজার থেকে একটি লাইন নিয়ে তা থেকে পুরো বিল্ডিং এর সবগুলো চুলাতে সাব লাইন দেয়া হয়ে থাকে। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের আগে এই ধরনের লাইনগুলো সিঙ্গেল লাইন করে নিতে হবে। রাইজার থেকে একাধিক চুলার জন্য একটি লাইন টানা থাকলে সেখানেও প্রিপেইড মিটার স্থাপন সম্ভব হবে না। প্রিপেইড মিটারের সুফল পেতে হলে রাইজার থেকে চুলা পর্যন্ত লাইন পুরোপুরি ঠিক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। লাইনে কোনো লিক থাকলে চুলা না জ্বালালেও মিটারের টাকা শেষ হয়ে যাবে। তাই লাইনের লিক না থাকার ব্যাপারটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয় প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের আগে উক্ত চুলার বিপরীতে যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।

আজ সকালে নগরীর হালিশহর এল ব্লক এলাকার একটি বাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে পুরো কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। ক্রমান্বয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে। জাপান থেকে ইতোমধ্যে মিটারের চালান চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে। আরো মিটারসহ আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি আসছে। ৬টি টিমে বিভক্ত হয়ে প্রতিদিন নগরীর বাসাবাড়িতে মিটার স্থাপনের কাজ চলবে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম পরিচালনায় নগরবাসীর সহায়তা কামনা করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধীরে ধীরে চাল ছেড়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধআকাশে ড্রোন ঘুড়ি লেজার রশ্মি নয় : আইএসপিআর