গ্যাসের প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজে গতি আনতে হবে

| মঙ্গলবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ

প্রিপেইড গ্যাস মিটার বসানোর কাজ স্থবির হয়ে আছে। এই সিস্টেম চালু হওয়ার পর দেখা গেছে ব্যাপক উপকার হয়েছে গ্রাহকের। লাভবান হয়েছে জাতি। বলা যেতে পারে, দেশে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করার ফলে গৃহস্থালিতে গ্যাস ব্যবহারে গ্রাহকরা সচেতন হয়েছে। দুর্ঘটনা কমেছে। আমরা দেখেছি এতে গ্যাসের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার, গ্রাহক এবং সার্বিকভাবে দেশ উপকৃত হয়েছে। এতোসব সুবিধা থাকার পরও দেশে প্রিপেইড গ্যাস মিটারের পরিমাণ খুবই কম।

গত ২৩ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘অপেক্ষা আর ফুরোয় না’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে গ্যাসের প্রি পেইড মিটারিং সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হলেও গত ৫ বছরে তা বড় কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। দেশের নগন্য সংখ্যক গ্রাহককে বহুল প্রত্যাশার প্রি পেইড মিটারিং সিস্টেমের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘসূত্রতার কারণে অন্যদের অপেক্ষা আর ফুরোয় না। সংবাদে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে প্রায় ছয় লাখ আবাসিক গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইডের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৫ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহককেই সরকারের নির্ধারিত বাড়তি গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে নতুন করে এক লাখ প্রি পেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকার প্রকল্প কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু প্রকল্পটির কনসালটেন্ট নিয়োগই সম্পন্ন হয়নি। ইতোমধ্যে একবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ভেস্তে গেছে। নতুন করে কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকা অঞ্চলে সাড়ে তিন লাখের মতো গ্রাহককে প্রি পেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। তিতাসে আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তার কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যান্য কোম্পানিগুলোর অবস্থাও একই। সিলেটের জালালাবাদ, কুমিল্লার বাখরাবাদ, পশ্চিমাঞ্চলসহ সবগুলো কোম্পানি প্রি পেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করলেও কোনটিই পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

এতে করে চট্টগ্রামের প্রায় সাড়ে ৫ লাখসহ দেশের ৩৫ লাখেরও বেশি আবাসিক গ্রাহক প্রি পেইড মিটারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা সরকার নির্ধারিত বাড়তি দরে প্রতি ডাবল চুলা বাবদ ৯৭৫ টাকা এবং সিঙ্গেল চুলা বাবদ ৯২৫ টাকা করে বিল পরিশোধ করছেন। অথচ ৫/৭ জনের একটি পরিবারে আবাসিক চুলায় পুরো মাসে কোনভাবেই ৬০০ টাকার বেশি গ্যাস ব্যবহৃত হয় না। প্রি পেইড মিটারের সুবিধা যারা পেয়েছেন তাদের কোনো কোনো পরিবার ৪শ’ টাকার গ্যাস দিয়ে পুরো মাসের রান্নাবান্না সারছেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি চুলায় বাড়তি ব্যয় হয় গড়ে ৩শ’ টাকা। এ হিসাবে সারাদেশে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়তি বিল দিতে হয়। ছয়টি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিই এই বাড়তি টাকা আদায় করে আসছে।

রিচার্জের যে প্রক্রিয়া বর্তমানে চালু আছে, তাতে খুশি নন গ্রাহকরা, বরং বিরক্ত। কারণ কার্ড রিচার্জ করার জন্য তাদেরকে এজেন্টের কাছে সশরীরে যেতে হয়। মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাপের মাধ্যমে প্রিপেইড বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জ করা গেলেও গ্যাসের ক্ষেত্রে এই সুবিধা নেই। এতদসত্ত্বেও গ্রাহকরা প্রি পেইড মিটারের সুবিধা পেতে আগ্রহী। অন্যদিকে একজন প্রি পেইড গ্রাহক বিল সাশ্রয়ের জন্য যেভাবে চুলা ব্যবহার করেন প্রি পেইডের বাইরের গ্রাহক সেভাবে করেন না। এতে অনেক টাকার মূল্যবান গ্যাস অহেতুক পুড়িয়ে ফেলা হয়। এমনকি কাপড় শুকানোর জন্যও গ্যাস পোড়ানো হয় বলে আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। যা প্রি পেইড মিটারে করা হয় না। ফলে প্রি পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্রাহকেরই যেমন লাভ হয়, তেমনি জাতিও অনেক লাভবান হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে সংবাদে। এতে তিনি বলেন, পেট্রোবাংলা চাইলেই প্রি পেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে না। এরসাথে মন্ত্রণালয়সহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নানা বিষয় জড়িত। সবগুলো ধাপ পার হতে এক একটি প্রকল্পের কয়েক বছর পার হয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আসলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নানা ভালো কাজের উদ্যোগ নেওয়ার পরও তার বাস্তবায়ন ঘটছে না। দীর্ঘসূত্রতা পেয়ে বসে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষ সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছে। গ্যাসখাত নিয়ে নানা অনিয়ম দুর্নীতির কথা মানুষের মুখে মুখে। এতে এই সেক্টরের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। তাই অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি না করে সহজভাবে কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সাধারণ জনগণের পক্ষে আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে