‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না/আমি গাইব গাইব বিজয়েরই গান/ ওরা আসবে চুপি চুপি/যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ/…।’ একাত্তরের এদিন সত্যিই খুলে গিয়েছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা অর্জনের প্রতিরোধ যুদ্ধের সব ক’টা জানালা।
২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাঙালি এই দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সবুজের জমিনে রক্তিম সূর্য খচিত মানচিত্রের বাংলাদেশে আজ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং জাতীয় দিবসের ৫৩ বছর। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সকল সরকারি, আধা–সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত পরিষদ মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এদিকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ সংসদ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সর্বস্তরের মানুষ আকবরশাহ থানাধীন কাট্টলীস্থ (ডিসি পার্কের পাশে) জাকির নগর এলাকায় নবনির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ববর্র ও নির্বিচার গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও সর্বব্যাপী পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি তাদের সর্বশক্তি নিয়ে ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় নিয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। সূর্যসন্তানরা তুমুল যুদ্ধ করে লাখো প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন মহান স্বাধীনতা।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন–সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মুক্তির ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস। স্বাধীনতার ইতিহাস ৩০ লাখ শহিদের আত্মদান আর দুই লাখ মা বোনের ত্যাগ–তিতিক্ষা আর কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও সংগ্রামের গৌরবগাথা গণবীরত্বের ইতিহাস। একাত্তরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের অনবদ্য অধ্যায় হলো স্বাধীনতার ঘোষণা। বাঙালি জীবনের অগণিত দিনের চেয়ে আলাদা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। এই দিনটি হচ্ছে হাজার বছরের বাঙালির অধীনতা থেকে মুক্ত হওয়ার জীবন–মরণ লড়াইয়ে নেমে পড়ার দিন। স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ স্বাধীনতা মুহূর্তে অর্জিত হয়নি। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের পেছনে রয়েছে এক কালজয়ী মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা। ইতিহাসের এক স্মরণীয় আপসহীন লড়াইয়ের বিনিময়ে জন্ম লাভ করে চিরসবুজ বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ দেশ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থ–সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রাপ্তি নিয়েই এবারও জাতি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।