গো-খাদ্যের দামে হঠাৎ অস্থিরতা

বিপাকে খামারিরা

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শনিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ করে আনোয়ারায় বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গো খাদ্যের দাম। বর্তমানে বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ার পাশাপাশি ভেজাল খাদ্যেও বাজার সয়লাব হয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণের এ মৌসুমে হঠাৎ করে বাজারে এ ধরনের অস্থিরতায় আনোয়ারার দুই শতাধিক খামারি লোকসানে পড়েছেন। তারা চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন বলে জানিয়েছেন।
খামারিরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গরুর চাহিদা মেটাতে সরকারের যে পরিকল্পনা আছে তার সাথে গো-খাদ্যের বাজারে চলমান অস্থিরতা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। গো-খাদ্যের বাজারে ঊর্ধ্বমূল্যের লাগাম এখনি টানা না গেলে খামারিরা ক্ষতিতে পড়বেন। দিন দিন তাদের মনোবল ভেঙে যাবে। তাতে কোরবানির পশুর বাজারে গরুর সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি দামও বেড়ে যেতে পারে।
আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ সরকারহাট হচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সব চেয়ে বড় দেশি গরু মহিষ বিক্রির হাট। এ হাটে গরুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে আনোয়ারায় গড়ে উঠেছে অনেক গরুর খামার। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে গরু কিনতে ক্রেতারা এ হাটে ভিড় করেন। তাই বাজারে গরুর চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে আনোয়ারার খামারিরা বাণিজ্যিকভাবে দেশি জাতের রেড ক্যাটেল গরু লালন পালনের দিকে ঝুঁকছেন বেশি। খামারিরা জানান, এ জাতের গরু দুগ্ধ উৎপাদনের জন্যও বরাবরই বিখ্যাত। বর্তমানে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এখানকার দু’শতাধিক খামারি চরম বিপাকে পড়েছেন। খামারিদের অভিযোগ দাম বাড়ার সাথে সাথে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওজনে কম ও খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে খামারিদের ঠকিয়ে ফায়দা লুটছে। ভেজাল খাদ্যের প্রভাবে গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কমে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে জানা গেছে।
আনোয়ারা উপজেলা ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি, মেসার্স হুদা ডেইরি ফার্মের মালিক নুরুল হুদা জানান, গত এক মাস ধরে বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। এখানে প্রায় ২০০ খামার রয়েছে। তারা গরু মোটাতাজাকরণের পাশাপাশি দুগ্ধ উৎপাদনে জড়িত। গত এক বছর ধরে করোনার প্রভাবে খামারিরা এমনিতেও লোকসানে জর্জরিত। তার উপর আবারো করোনার হানায় সব কিছুতে অস্থিরতা নেমে এসেছে। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে গো খাদ্যের বাজার অস্থির করে তুলেছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে পাতা ভুষি বস্তা প্রতি ১ হাজার ৫০ টাকার স্থলে ১ হাজার ৩০০ টাকা, চিকন ভুষি ১ হাজার ৫০ টাকার স্থলে ১ হাজার ৪০০ টাকা, সয়াবিন ২ হাজার ৫০ টাকার স্থলে ২ হাজার ৭০০ টাকা, মুগ পাউডার ৯০০টাকার স্থলে ১ হাজার ২০০টাকা, ভুট্টা ভাংগা ৮৫০ টাকার স্থলে ১ হাজার ১০০ টাকা, খৈল ২ হাজার টাকার স্থলে ২ হাজার ৪০০টাকা, কুড়া ৬২০ টাকার বস্তা এখন ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খামারিরা আরো জানান, দাম বাড়ার সাথে সাথে বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খাদ্যে পাথর, বালি মিশ্রিত করে ওজনে ভারী করে ভেজাল খাদ্যও বাজারে বেচাকেনা চলছে। আসল নকল চেনা দায় হয়েছে। সে কারণে খাদ্যের পুষ্টিগুণও কমে নির্দিষ্ট সময়ে গরুর যে ওজন বাড়ার কথা তা বাড়েনি বরং দুধের উৎপাদনও দিন দিন আরো কমে যাচ্ছে। ফলে লোকসানে জর্জরিত হয়ে অনেক খামারি চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন।
আনোয়ারা ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বটতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, খাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পাশাপাশি বাজারে ভেজাল খাদ্যে সয়লাব হওয়ায় খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা ও বাজার মূল্যের অস্থিরতা দূর করতে প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে তিনি কর্তৃপক্ষের সু- দৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমারা গেছেন প্রিন্স ফিলিপ
পরবর্তী নিবন্ধর‌্যাবের চার সদস্যকে ধরল পুলিশ