দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বাংলাদেশের সব সময়ের সেরা প্রতিপক্ষ ভারত। সেটা পুরুষ কিংবা মহিলা যে বিভাগেই হোক না কেন। এমনকি বয়স ভিত্তিক ফুটবলেও ভারতের সাথে পেরে উঠেনা বাংলাদেশ। তবে এবারে ইতিহাস বদলে দিল বাংলাদেশের মেয়েরা। মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে গতকাল মঙ্গলবার ‘এ’ গ্রুপের সেরা হওয়ার লড়াইয়ে ভারতকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। জোড়া গোল করেছেন সিরাত জাহান স্বপ্না। একটি গোল করেন কৃষ্ণা রানী সরকার। ভারতের বিপক্ষে মেয়েদের এটি প্রথম জয়। এর আগে একবার মাত্র ড্র করতে পেরেছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলা আগের ১০ ম্যাচে বাংলাদেশের হার ছিল ৯টি। ড্র ছিল একটি। ব্যর্থতার সে বৃত্ত এবার গোলের ফুল ফুটিয়ে ভাঙল বাংলাদেশ দল। শুধু তাই নয় দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে ভারতের অপরাজেয় যাত্রার রাশ টেনে ধরল বাংলাদেশ। আগের পাঁচ আসরে শিরোপা জয়ের পথে ভারত ২২ ম্যাচ খেলে জিতেছিল ২১টিতে। ড্র করেছিল একটি। ওই একমাত্র ড্র ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৬ সালে। শিলিগুঁড়ির আসরে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে।
টানা দুই জয়ে আগেই সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল দুই দল। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় এ ম্যাচ ড্র করলে গ্রুপ সেরা হত ভারত। আর সেমিফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে এড়াতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। টানা তিন জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে চাওয়া পূরণ করল গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সাফের ষষ্ঠ আসরে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ৬-০ গোলের ব্যবধানে।
খেলার সপ্তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। আঁখির পাস ধরে সানজিদা খাতুন আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান গোলমুখে। কিন্তু ভারতের গোলরক্ষক অদিতি চৌহান বল ধরতে যাওয়ার সময় কৃষ্ণার সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে যান। স্বপ্না টোকা দিয়ে বল জালে জড়ালেও রেফারি বাজান ফাউলের বাঁশি। ১২ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাসে মাতে বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে এগিয়ে যান অধিনায়ক সাবিনা। তার বাড়ানো পাস ধরে কৃষ্ণা দেন বঙের দিকে ছোটা স্বপ্নাকে। বাঁ পায়ের নিখুঁত প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন স্বপ্না। ভারতের বিপক্ষে এটি তার দ্বিতীয় গোল। একটু পর ব্যবধান দ্বিগুণের সুযোগ নষ্ট করেন স্বপ্না। মাঝমাঠ থেকে মনিকা চাকমার লং পাস ধরলেও ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি স্বপ্না। ২২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। শামসুন্নাহারের থ্রো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে স্বপ্নাকে বল বাড়িয়ে দেন কৃষ্ণা। স্বপ্নার কাছ থেকে ফিরতি পাস পেয়ে নিখুঁত শটে বল জালে পাঠান কৃষ্ণা। সাফে এটি তার প্রথম গোল। ২-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধেও আধিপত্য বজায় থাকে বাংলাদেশের। ৫৩ মিনিটে ব্যবধান আরো বাড়ায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাবিনার থ্রু পাস পেয়ে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে স্বপ্না বল পাঠান জালে। তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় গোল। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-০ গোলে। শেষ পর্যন্ত নিজেদের দুর্গ অক্ষত রেখে ম্যাচ শেষ করে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত কোন গোল হজম করেনি বাংলাদেশ। দিয়েছে ১২ গোল। আগামী শুক্রবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ ভুটানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের মেয়েরা।