গৃহিণী কোনো বেকার শব্দ নয়

হৈমন্তী তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

আন্তরিক ও পরিষ্কার মনের মানুষের কষ্ট বেশী, কারণ তারা সরল ও বোকা। মুখ ফিরিয়ে চলা মানুষের কষ্ট হয়না কারণ তারা কঠিন চালাক। জীবনে সরলতার-ধাক্কা অনেক খেয়েছি,অসময়ে কেউ পাশে থাকেনা, এটাতো কতোবার দেখলাম।
এই কঠিন পৃথিবীতে সরলতার কোন দাম নেই, আন্তরিকতা, আতিথেয়তা এগুলো জীবনে অদৃশ্য শান্তি ছাড়া আসলেই তেমন কাজে আসেনা। বিয়ের পর রসুইঘরে সময় কাটাতাম বেশী। বইয়ের পোকা হয়েও দায়িত্ব এড়াতে পারেনি বলেই আজ শুধু গৃহিণী শব্দটা বহন করছি। আমার মতো কতোশতো নারী বহন করে চলছে তার সঠিক কোন হিসাব নেই। আমার মতো অনেক শিক্ষিত বেকার পড়ে আছে অন্দরমহলে, একক পরিবারে বাচ্চা লালন, পালন, নিরাপত্তার কাছে জিম্মি। আমাদের সৃজনশীলতার গলা চিপা আর্তনাদ কেউ শোনে না। উঠে দাঁড়ানোও কঠিন। আমাদের সমাজটাই তো এমন। নারীর শিক্ষা আগুনের লেলিহান শিখায় কখনো মৃদু কখনো দাউদাউ করে কাঁচা জিনিস পাকাতে। নারী মানে ভাতের হাঁড়ি নামানো দুটো হাত। আমাদের গৃহিণীদের জন্য কিছু সুযোগ বর্তমান সরকার যদি করতেন, পার্ট টাইম হলেও অন্তত একঘেয়ে শব্দটা থেকে মুক্তি পেতো শতো মুখ লুকিয়ে কাঁদা মেয়েগুলো। বেবি কেয়ারও নেই, বাচ্চা হওয়ার পর জব সামলানো কঠিন ভেবে অনেকেই ফিরে আসে। এখানেও একজন নারী অসহায় তাদের সন্তান বাসগৃহে নিরাপওাহীন বা কেউ চাইলেও বিয়ের পর পা বাড়াতে পারেনা। সংসার, সন্তান তার জন্য দুর্বলতা হয়ে দাঁড়ায়। কোন রকম জরিপও হয়না আসলে কতো শিক্ষিত বেকার আছে আমাদের রসুইঘরে। বেকার বলছি কারণ একটা পুরো সংসারে অনেক সেক্টর থাকে, আটঘণ্টা তো মজুরী নির্ধারিত হয়, তাহলে একজন গৃহিণী কতঘণ্টা কাজ করে যান, একটানা কাজেরফাঁকে চা বিরতিও মনে হয় হয়না, সবার থালায় সব ঠিক আছে কিনা, যতোই বলুক খেয়ে নাও, তবুও সবার রসনা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার দায়িত্বে থাকেন আমাদের মায়েরা, আমরা নারীরা। আমার লেখা কোন অভিযোগ নয়, শুধু নিজের খেয়ালে কোন সময়ের অভিমানমাত্র। এ অভিমানে কতো খুন্তি পোড়া ছ্যাঁকা, আর ভাতের মাড় পড়ে হাতে মনের অবচেতনে। কতো কিছু করে পাস দেওয়া নারীরা শুধু চব্বিশ ঘন্টা মেধার অপচয় করে মানুষের ভুঁড়ির তৃপ্তি আর বাচ্চার হাজার বায়না, আবদার সামলাতে, কখনও বিষন্নতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে যায় হাতে নুন নিয়ে কম হলো নাকি বেশী হলো? পুরোটা রসুইঘর আমার কাছে রহস্যময় মনে হয়।একেক বোতলে একেক জিনিস,মনে রাখার মতো বিষয় ও থাকে,হরলিকস আর কফির বোতলে চাপাতা নাকি মসুরডাল রাখলে কোনটাতে সুন্দর দেখাবে? রান্না ঘরেও সৃজনশীলতা আছে,একজন গৃহিণীর কোন দাবি থাকেনা,দায়ও থাকেনা, দায়িত্ব থাকে। তাহলে তাকে মেশিন ভাবা হয় কেন? বিয়ের পর একটা মেয়ে শুধু পরিবর্তন করতে থাকে নিজেকে। হাজারো গুণ অর্জন করতে হয়। এটাতো শুধু আমি বা আমরা নই, সামগ্রিক ভাবে দুএকজন ছাড়া অনেক নারী আজ চাইলেও বাধাগ্রস্ত কেন আমাদের গৃহিণীদের কোন কাজের সুযোগ দেওয়া হয়না,আমার জানা নেই, অনলাইনে বিজনেস খুব ভালো উদ্দেশ্য, কিন্তু এখানেও সময় দিতে হয়। সাপোর্ট লাগে, কুরিয়ার করা,তদারকি করা। সবার তো সব সুযোগ হয়না। যেদিন ঘরের আলো আলোকিত হবে সেদিন হবে আমাদের সমতা। পুরুষ সবসময়ই বাধা নয়। নারীরাও অনেক সময় নারীদের পিছিয়ে দেয়। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়ার অনুরোধ। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক সমাজ। একজন মা, একজন জীবনসঙ্গী ছাড়া সব নারীরাই একজন মানুষ, একজন আমি। তবুও নারীরা সংসার বাচ্চা কে প্রাধান্য দেয়, কারণ নারী বলেই আশার প্রদীপ জ্বেলে নিভিয়ে দেয়। না বলা কথাগুলো আফসোস, দীর্ঘশ্বাসে আটকে থাকে চোখের নোনাজলে, গৃহিণী কোন বেকার শব্দ নয়। কিছু দিন আগে দেখেছিলাম জিডিপিতে নারীদের শ্রম যোগ করা হবে।
শিক্ষিত নারী সমাজকে আরো অনেক কিছুই করা উচিত নারীদের সম্মান ও মূল্যায়নে। নারীশ্রম জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হোক। আমরা নারীরা ঘরকে ও সন্তানকে নিরাপদ রাখি বলেই দেশ ও সমাজ উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। গৃহিণী কোন বেকারত্ব নয়, ঘরে বাইরে সব জায়গায় নারীর ভূমিকা জাতীয় উন্নয়নে সম ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি হোক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবীর পূর্বসূরিদের প্রতি শ্রদ্ধা
পরবর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস: করোনা পরিস্থিতিতে করণীয়