গৃহায়ণের প্লট বা ফ্ল্যাট গ্রাহকদের যত অভিযোগ

নামজারি, বিক্রি বা নাম ট্রান্সফারে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ৩ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অফিসে নামজারি, নাম ট্রান্সফার, প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রয় অনুমতিসহ নানা কাজে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। অনেকে অভিযোগ করেছেন পদে পদে তাদের ঘুষের টাকা গুণতে হয়। অন্যথায় ঘুরতে হয় মাসের পর মাস, আটকে থাকে ফাইল। এতে প্লট ও ফ্ল্যাট মালিকদের অনেকেই ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে উঠেছেন।

সূত্র জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে তৎকালীন গৃহসংস্থান অধিদপ্তর হালিশহরে একটি কলোনি এবং ফিরোজ শাহ ও শেরশাহ কলোনি গড়ে তোলে। সেখানে দুই হাজার ৬৭৯টি গুচ্ছবাড়ি নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে হালিশহরে ৫২৬ একর জায়গায় এক হাজার ৯৭৮টি, ফিরোজ শাহে ১২৬. ১৩ একর জায়গায় ৫০১টি এবং শেরশাহে ৩৩.১০ একর জায়গায় ২০০ টি গুচ্ছবাড়ি নির্মাণ করা হয়। এসব বাড়িতে অবাঙালি মোহাজেরদেরকে পুনর্বাসিত করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা দেশত্যাগ করলে বাড়িগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে সেগুলো দখলবেদখলে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৩৩টি বাড়ি ১৯৮৭ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সরকার। যা দখলদার, শহীদ পরিবারের উত্তরাধিকারী এবং সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ নাগরিকদের কাছে সহজ কিস্তিতে বিক্রি করে দেয়া হয়।

উপরোক্ত বাড়িগুলোর বাইরে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে সাড়ে সাত হাজারের মতো প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে মোট ৯২৬টি ফ্ল্যাটও রয়েছে। সবমিলে চট্টগ্রামে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে ১২ হাজারের মতো গ্রাহক রয়েছেন। তাদের অনেকেরই অভিযোগ, তারা বিভিন্ন সময় কোনো না কোনোভাবে নগরীর জিইসি মোড়স্থ গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। এই সংস্থায় নিজেদের প্রয়োজন মিটাতে গেলেই ঘুষ প্রদান করতে বাধ্য হন বলে ইতোমধ্যে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কোনো গ্রাহক প্লট, ফ্ল্যাটের নামজারি, বিক্রির অনুমোদন বা ট্রান্সফার করতে চাইলে তার ফাইল চট্টগ্রাম অফিস থেকে পাঠানো হয় ঢাকায়। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই কেবল গ্রাহকের কাজটি সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অফিসের সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ ও মতামতের উপরই ঢাকায় ফাইলটির ভাগ্য নির্ধারণ হয়। চট্টগ্রাম থেকে ঠিকঠাকভাবে সুপারিশ গেলে ঢাকায় ফাইল অনুমোদিত হয়, সুপারিশে গোলমাল হলেই সব উল্টে যায়। একজন গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তার বাড়ির নামজারি করতে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়া হয়। পরে সেলস পারমিশনের জন্য ফাইল জমা দিলে নতুন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। ওই গ্রাহক টাকা না দেয়ায় তার বাড়িতে অবৈধ নির্মাণ রয়েছে উল্লেখ করে ফাইল ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে সে ফাইলে অনুমোদন না দিয়ে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়ে ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। ওই গ্রাহক ফাইল নিয়ে আবারো তদবিরে গেলে এবার টাকার অংক আরো বেড়ে যায়। বলা হয়, এখন ঢাকাকেও ম্যানেজ করতে হবে।

হালিশহর জি ব্লকের একজন গ্রাহক (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) তার বাড়ি বিক্রি করার অনুমোদন নিতেও ঘুষ দিতে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। এভাবে ফাইল আটকে রেখে সব গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয় বলে জানান একাধিক গ্রাহক। সংঘবদ্ধ একটি চক্র গৃহায়নের বারো হাজার গ্রাহককে জিম্মি করে রেখেছে বলে মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, আগে দুদক এখানে ছয় কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করায় কিছুদিন সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলেছিল। এখন আবারো আগের মতো ফাইল আটকে রাখার নাটক শুরু হয়েছে।

এসব অভিযোগ নিয়ে গতকাল সংস্থার একজন পদস্থ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়া গণমাধ্যমে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছু কর্মচারীর কারণেই সকলের বদনাম হচ্ছে। চা পানি খাওয়ার কথা বলে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে ‘বকশিস’ আদায় করে বলে শুনেছেন। তবে ঢালাওভাবে জিম্মি করে ঘুষ আদায় করার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিএনপি নেতৃবৃন্দের নিন্দা ও প্রতিবাদ
পরবর্তী নিবন্ধতারেকের ৯, জোবাইদার ৩ বছর সাজা