গোপন তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে (ছোট সাজ্জাদ) ধরার জন্য অভিযান চালায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ ও চান্দগাঁও থানার অভিযানিক দল। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সাজ্জাদ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। সাজ্জাদের ছোড়া গুলিতে পুলিশের দুই সদস্য, স্থানীয় দুইজনসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে সাজ্জাদ পালিয়ে যাওয়ার পর তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে পুলিশের তালিকায় থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের অবস্থান জানতে পেরে নগরের অঙিজেন মোড়ের জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযান চালায় পুলিশ।
আহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন, চান্দগাঁও থানার সহকারী উপ–পরিদর্শক ফাইয়াছ হাসমিনুর রোবেল এবং রাজু আহমেদ। এছাড়া কাজল কান্তি দে (৩৬) ও মো. জাবেদ (৩৪) নামে স্থানীয় দুইজন সাজ্জাদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে কাজল কান্তি দে অক্সিজেন মোড়ের সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত। আহত দুই পুলিশ সদস্য দামপাড়া পুলিশ হাসপাতালে এবং স্থানীয় দুজন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাজ্জাদের অবস্থান শনাক্ত করে গভীর রাত সাড়ে ৩টা থেকে ভোর ৪টার দিকে অভিযানে যান পুলিশ সদস্যরা। সিএমপির বায়েজিদ ও চান্দগাঁও থানাসহ আরও কয়েকটি থানার পুলিশ অভিযানে অংশ নেয়। পুলিশের কয়েকটি টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে সাজ্জাদ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পাশের একটি ভবনের ছাদে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন পুলিশের দুজনসহ চারজন। সাজ্জাদের নামে নগরের হত্যা–ছিনতাই–চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
সিএমপির উপ–পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) রইস উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ বায়েজিদ থানার জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনের একটি ভবনে অবস্থান করছে। সেই অনুযায়ী আমাদের চান্দগাঁও–বায়েজিদসহ কয়েকটি থানার অভিযানিক দল তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। এসময় সাজ্জাদ পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে স্থানীয় দুজনসহ মোট ৪ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে দুজন আমাদের পুলিশ সদস্য। তিনি বলেন, অভিযানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা মোট ৬ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে সে বাড়ির ছাদে উঠে পাশের আরেকটি ভবনে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে সাজ্জাদের স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বায়েজিদ বোস্তামী থানা–সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা–পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে জামিনে বেরিয়ে হয়। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অঙিজেন অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালান সাজ্জাদ।
স্থানীয়রা জানান, চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ কালারপুল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে তিনি গুলি করেন। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, গত ২১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া এলাকায় আফতাব উদ্দিন নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও নিহতের পরিবার বলছে, সাজ্জাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের করা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক ও বায়েজিদ সীমানা–সংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় মো. আনিস ও মাসুদ কায়সার নামের দুই যুবককে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায়। পুলিশ বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। দুটিতে সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়। আসামিরা ধরা না পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান নিহত মাসুদ কায়সারের ভাই মো. আরিফ।












