১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছিল। বাজেট অধিবেশনেও ভাষার প্রশ্নে, ১৪৪ ধারা জারির প্রশ্নে সরকারপক্ষ ও স্পিকার সবাই সরাসরি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা থেকে দূরে থাকেন। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের ওপর গুলি চললে বিধান পরিষদে এ নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তবে এটা ঠিক, এতদিন পর বিধান পরিষদের সেই উত্তেজনার উত্তাপ উপলব্ধি করা কঠিন। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী নুরুল আমিন ওই দিন ১৯৫২–৫৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। এ সময় নাজমুল হক জানতে চান, সরকার ভাষা কমিটির সুপারিশসমূহ গ্রহণ করেছে কিনা। উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদ জানান, গৃহীত হয়নি, বিবেচনায় রয়েছে।
আনোয়ারা খাতুন মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান অনশন করছেন। জনগণ তার সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের বিরোধিতায় এ প্রস্তাব অগ্রাহ্য হয়। এরপর খয়রাত হোসেন অপর মুলতবি প্রস্তাবে পাকিস্তান অবজারভার বন্ধের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতায় সেটিও নাকচ হয়ে যায়। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি যখন বিধান পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়, তখন বাইরে প্রচণ্ড আন্দোলন চলছে।
অধিবেশনের শুরুতে মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ স্পিকারকে উদ্দেশ করে বলেন, যখন দেশের ছাত্ররা, যারা আমাদের ভাবী আশাভরসাস্থল, পুলিশের গুলির আঘাতে জীবনলীলা সাঙ্গ করছে, সেই সময় আমরা এখানে সভা করতে চাই না। প্রথমে এনকোয়ারি হোক, তারপর হাউজ চলবে।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করে শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রভাষার দাবি জানাচ্ছিল। পুলিশ সেখানে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে এবং গুলি করেছে। শুধু তাই নয়, তারা অসংখ্য ছাত্রকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করেছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার ও অপমানের। এ অবস্থায় এই অধিবেশন চলার কোনো মানে হয় না।
অধিবেশনের শুরুতেই মনোরঞ্জন ধর প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, চলুন যাই, দেখে আসি ছাত্রদের কী অবস্থা। আমরা সামনে থাকব। আপনার কোনো ভয় নেই। প্রধানমন্ত্রী চুপচাপ থাকলেন। তারা সবাই মিলে জ্বালাময়ী বক্তৃতায় শুরু করেছিলেন। আমাদের প্রতিবাদের মুখে তখন অধিবেশন সাময়িকভাবে মুলতবি করা হয়। অবশ্য সেদিন ৫টা ১০ মিনিটে অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এ সময় পূর্ব বাংলা সরকারের চিফ সেক্রেটারি আজিজ আহমেদের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মনোরঞ্চন ধরের ভাষায়, আজিজ আহমেদ ওয়াজ দ্য রিয়াল রুলার অব দ্য কান্ট্রি।