গুরুকুলের প্রতি শিক্ষাঋণের স্বীকারোক্তি ও অনুকরণীয় শ্রদ্ধা নিবেদন

স্বপন কুমার চক্রবর্তী | মঙ্গলবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

‘দীপান্বিত গুরুকুল’ বইটির লেখক নিতাই সেন। বইটি পড়ে গুরুকুলের প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা নিবেদনের অভিনব কৌশল লক্ষ্য করলাম। আমি প্রথমেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই লেখক নিতাই সেনকে। সত্যিকার অর্থেই তিনি একজন আলোকিত ও আলো বিতরণকারী এক মশাল। তিনি কর্মজীবনে একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা (যুগ্মসচিব)। কথা বলে এবং প্রকাশিত বই ও তার লেখার বৈশিষ্ট্য দেখে অনুমিত হলো যে, তিনি বিনয়ী নিরহংকারী ও বহু গুণের অধিকারী একজন মানুষ। এই মানুষটির যে কোন একটি গুণ প্রাপ্তিই একজন মানুষের জন্য অহংকারের বস্তু হতে পারে। আমাকে তাঁর লেখা দুটি বই পাঠানো একটি মহানুভবতা।

“দীপান্বিত গুরুকুল” বইটিতে তিনি যাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তাঁদের পান্ডিত্য ও মহত্ব দেশে-বিদেশে শ্রদ্ধার সাথে সমানভাবে স্বীকৃত। তাঁরা ছিলেন জাতির বিবেক, আলোকিত এক একটি প্রজ্জ্বলিত দীপশিখা। এক সাথে এতোগুলো প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তির স্নেহধন্য আদর্শ ছাত্র ছিলেন লেখক নিতাই সেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি ঈর্ষনীয় বিষয়। বলতে সংকোচ নেই যে, এইটুকু অধিকার একান্তই কেবল লেখকের নিজস্ব অর্জন।

বইটির উৎসর্গ অংশে লিখেছেন, “আমার অথিক গুরু, ব্যথিক গুরু অগণন”। আমার প্রথম যৌবনের স্বপ্নের রাজপুত্র শিক্ষাগুরু ড. মনিরুজ্জামান, শ্রদ্ধাষ্পদেষু- শিক্ষাগুরু ড. মনিরুজ্জামানকে তিনি কি পরিমাণ শ্রদ্ধা করেছেন তা লাইন দুটিতে স্পষ্ট হয়। এই শিক্ষকের অপরিশোধ্য ঋণ একজন ছাত্র হিসেবে লেখক কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করলেন। লেখক বইটির প্রচ্ছদে লিখেছেন- ‘প্রথম জন্মের পর জীবনের বেড়ে ওঠার দিনগুলি দ্বিতীয় জন্মের পূর্বাভাস দেয়। যার শুরু হয় শিক্ষালয়ে, শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার নিবিড় ছায়ায়। আদরে অথবা মায়ায়। বিশ্বকে জানা কিংবা চেনার দৃষ্টি খুলে যায়। এ এক অন্যরকম জীবন বোধ। উপলব্ধির নতুন দিগন্ত। এভাবেই দীপান্বিত গুরুকুলের হাত ধরে দ্বিতীয় জন্মের শুরু। শৈশব থেকে পরিণত জীবনের প্রবাহমানতায় অদ্ভুত মোহাচ্ছন্ন তার ইতিহাস। যার পরতে শুধুই গুরুকুলের প্রচ্ছন্ন আদর মমতা’।

কি সহজ সরল স্বীকারোক্তি। কত যোগ্য ছাত্র হলে এমন অকৃপণ গুরুঋণের দায় স্বীকার সম্ভব! এখন প্রশ্ন যে, গুরুকুল শ্রেষ্ঠ বলে এমন ছাত্র তৈরী হয় নাকি ভালো ছাত্র হলে? প্রশ্ন জাগে “সোনার হাতে সোনার কাঁকন কে কার অলংকার?”।

যাদের সান্নিধ্যে এসে লেখক স্নেহধন্য হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন বাঙ্গালী জাতির এক একজন এক একটি আলোকবর্তিকা, সর্বজন শ্রদ্ধেয়। উল্লেখিত গুরুকুলের যে কোন একজনের একটি অটোগ্রাফ কিংবা নিদেনপক্ষে এক সাথে একটি ফটোগ্রাফ নিজের কাছে রাখা একটি অহংকার করার মতো বিষয় হতে পারতো। লেখকের শ্রদ্ধেয় গুরুকুল দেশের জন্য ছিল অহংকার। তাই লেখক লিখেছেন- “তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ছিলেন দেশের সেরা শিক্ষকবৃন্দ। সৈয়দ আলী আহসান স্যার ছাড়াও ছিলেন ড. আনিসুজ্জামান, ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ড. মনিরুজ্জামান, ড. মাহমুদ শাহ কোরেশী, ড. মোঃ কাইউম, ড. আব্দুল আউয়াল, ড. মঞ্জুর মোর্শেদ, ড. হায়াৎ মাহমুদ, ড. জাহাঙ্গীর তারেক, ড. রশিদ আল ফারুকী, ড. রাজীব হুমায়ুন, জনাব আবু জাফর, ড. শিপ্রা দস্তিদার, ড. শাহজাহান মুনীর, ড. শামছুল আলম প্রমুখ।”

এই দেশে সেরা শিক্ষকদের স্মরণ ও শিক্ষাঋণের কথা, দায়বদ্ধতার কথা লেখক এই বইটিতে পৃথক পৃথক ভাবে বর্ণনা করেছেন। আর তাতে করে অনেক অজানা গুরুত্বপূর্ণ ও কৌতুহলোদ্দীপক তথ্য জানা যায় বইটির মাধ্যমে।

এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান সম্পর্কে লিখেছেন, “স্যার আমাদেরকে বাংলা গদ্য পড়াতেন। বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম থেকে আধুনিক বাংলা গদ্যের ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় ও সরলভাবে আমাদের কাছে উপস্থাপন করতেন। আমরা অত্যন্ত অমনোযোগী ছাত্ররাও লক্ষ্য করতাম স্যার অত্যন্ত কঠিন বিষয়কে কোথাও কোন সংশয় বা জটিলতা ছাড়া উপস্থাপনা বা ব্যাখ্যা করে কিভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমাদেরকে অভিভূত করে রাখতেন। ক্লাসের পাঠদানের বাইরে স্যারের ছিল বিপুল রচনা সম্ভার, গবেষণা, বক্তৃতা, সৃজনশীল ও মননশীল সৃষ্টি কর্মকান্ড। এক জীবনে এতো বহুমুখী প্রতিভা এবং বর্ণ বৈচিত্রময় রচনা, যা “হাসি-বুদ্ধির বিদ্যুস্পষ্ট” বলে একমাত্র রবীন্দ্রনাথ- নজরুলের রচনা সম্ভারের সাথে তুলনীয় বলেই আমি মনে করি”। এই বইটি পড়ার মাধ্যমে পাঠকগণ অনেক নিগূঢ় তথ্য জানতে সক্ষম হবেন বলে আমার কাছে মনে হয়।

কি অসাধারণ বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনায় এক মহর্ষীর যাবতীয় সৃষ্টি-সম্ভার সম্পর্কে মূল্যায়ন এখানে তুলে ধরেছেন। জানতে আগ্রহী পাঠকদের নিকট বহু বিশ্রুত ড. আনিসুজ্জামানকে সরলভাবে তুলে ধরেছেন। এখানেও লেখক একটি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিলেন। আমরাও আমাদের এই আলোকে প্রজ্বলনকারী খাঁটি দেশ প্রেমিক প্রিয় ব্যক্তিকে গভীর ভাবে জানতে সক্ষম হতে পেরেছি। একজন শিক্ষাগুরুর সমগ্র রচনার একটা ধারণা, মাত্র কটি লাইনে তুলে ধরেছেন তিনি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য। ড. আনিসুজ্জামান ছিলেন সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার, স্বাধীনতার স্বপক্ষে তার ভুমিকা ছিল দিবালোকের মতো স্পষ্ট, নষ্টদের বিরুদ্ধে ছিলেন অকুতভয় এক সৈনিক। সকল সুন্দরের পক্ষে সদা বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে তিনি ছিলেন নির্ভীক সৈনিক। শিক্ষকতা পেশার বাইরেও তিনি তাঁর নাগরিক দায়িত্বকে গুরুত্ব দিতেন অসংকোচে। ড. আনিসুজ্জামানের মানবিক গুণ সম্পর্কে জানা যায় বইটি পড়ে। আমরা যারা নিকট থেকে এই মহান ব্যক্তিটিকে জানতে পারিনি, তাদের জন্য যথেষ্ট উপকরণ মিলবে এখানে। বহু বিস্তৃত ও বিশ্রুত ঘটনার মধ্যেও দু’একটি দৃষ্টান্ত লেখককে আকৃষ্ট করেছে। পাঠকবৃন্দও নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবেন তাঁর বিশাল হৃদয়ের সুন্দর দিকটিকে, যা তাঁর ভক্ত মহলে আরও বহুগুণ শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেবে। দেশবরেণ্য শিক্ষক ড. আনিসুজ্জামান ১৪ মে ২০২০ মৃত্যু বরণ করেন।

তিনি করোনায় অক্রান্ত ছিলেন ফলে তাঁর সম্মানে তেমন কোনো সমাবেশ করা যায়নি। করোনা- আতঙ্কগ্রস্ত দেশবাসীর মতো আমরাও অত্যন্ত আহত হয়েছিলাম। এ ব্যাপারে লেখক দু’একটি লাইনে তাঁর প্রিয় শিক্ষকের বিয়োগ ব্যথা প্রকাশ করেছেন এভাবে, “পৃথিবীর অনাদিকালের নিয়ম মেনে স্বজনেরা তাদের পরম প্রিয়জনের মুখটাও দেখতে পেলেন না। নদীর স্রোতধারার মত অযুত অশ্রুর সামান্য কয়েক ফোটা ঝড়ে গড়ালো করোনাকালে বিচ্ছিন্ন সব দ্বীপবাসী অনুরাগীর চোখে। স্যারের মৃত্যু নেই, মৃত্যু হতে পারে না। স্যার আজও আমার অভিভাবক। আমি আমৃত্যু স্যারের স্নেহ-ছায়ায় ভালোবাসা ও আশির্বাদে বেঁচে থাকতে চাই”। হৃদয় স্পর্শ করে যায় এ কথাগুলো। আমরা তাঁর ছাত্র হবার সৌভাগ্য অর্জন করিনি বটে তবে আমরা একান্ত গুরুবৎ তাঁর প্রতিটি কথা শুনেছি এবং হৃদয়ে গেঁথেছি। জাতি তাঁর অমৃতবাণী শুনার জন্য উদগ্রীব থেকেছে। তাঁর কতটুকু যোগ্য ছাত্র হলে লেখকের এমন অনুভুতি প্রকাশিত হতে পারে জানি না। আর কত যোগ্য শিক্ষক হলে একজন ছাত্রের এমন উললব্ধিতে আসে। লেখক আরও বলেছেন, “মানব জীবনে অনেক ধরনের ঋণ আছে- দেবঋণ, ঋষিঋণ, মাতৃঋণ, পিতৃঋণ, গুরুঋণ, ইত্যাদি। এর ভিতরে পিতা-মাতা এবং শিক্ষা গুরুর ঋণ কখনো পরিশোধ করা যায় না”।

এই অবক্ষয় এবং শিক্ষক অবহেলিত সময়ে লেখাগুলো খুব প্রয়োজনীয়। ইদানীং কালে ক্রমাগতভাবে শিক্ষকদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে, তাতে হতাশ হয়ে যাই। আর ভাবি, এমন শিক্ষক আর এমন ছাত্র তৈরী কি বন্ধাত্বের পর্যায়ে চলে যাবে? প্রসঙ্গত একটু বলতে ইচ্ছে হয়, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখেছি বাংলা একাডেমীর বই মেলা উদ্ব্‌োধন কালে তাঁর সম্মানে বিছানো লাল গালিচা তিনি মাড়িয়ে যান নি, তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরই প্রিয় শিক্ষক এই আনিসুজ্জামানকে। শেখ হাসিনাও যে এই পরশ পাথরের সংস্পর্শে এসেছিলেন।

তাঁর এই সময়টিকে লেখক শ্রেষ্ঠ সময় বলেছেন। সে সময় যারা ছাত্র হিসেবে যোগদান করে ছিলেন, পরবর্তী সময়ৈ তারাও স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এই সময় শুধু চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ সময় নয়, পুরো জাতির জন্য একটা মাহেন্দ্রযোগ বলা যায়। বইটিতে যে সব মনীষীর প্রতি লেখক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন, তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি এবং উপযুক্ত শব্দাবলী আমার ভান্ডারে নেই। শুধু তাঁদের মহৎ গুণের সম্পর্কে জেনেছি আর কিছুটা ঋদ্ধ হয়েছি। এক জনের চেয়ে আর একজন কম যান না। কেহ কারো চেয়ে কম বা বেশী গুণী কিনা তা আঁচ করার ক্ষমতা আমার নেই।

অভিনবভাবে বইটিতে আরও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন তাঁর শিক্ষক আবু হেনা মোস্তফা কামালকে, শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ড. জাহাঙ্গীর তারেককে এবং তাঁর অন্যসব শিক্ষক ও সতীর্থদেরকে। লেখক কেন শিক্ষককুলকে এতো বেশি শ্রদ্ধা করলেন, তা বুঝতে হলেও আগে শিক্ষক চিনতে হবে। নিজের অন্তরে সেই জ্ঞানকে ধারণ ও লালন করতে হবে। বিশ্বজোড়া পাঠশালা আমাদের, কিন্তু শিক্ষক বিহনে পাঠশালা অচল। এই শিক্ষকবৃন্দের অবদান স্বীকার করি কয়জনে? তাদের অবদানের কথা একটু সংক্ষেপে উল্লেখ করতে চাই। শিক্ষকের অবদান বহু ব্যাপক এবং বিস্তৃত। সমাজের সর্বাঙ্গীন উন্নতির ক্ষেত্রে, সমাজের সুনাগরিক তৈরী করার ক্ষেত্রে, সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একমাত্র চাবিকাঠি থাকে শিক্ষকেরই হাতে। শিক্ষক তো শুধুমাত্র শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। তিনি শিক্ষার্থীকে হাত ধরে এই জীবনকে চিনিয়ে দেন। নতুন নতুন শিক্ষার্থীকে উদ্বুদ্ধ করেন। শিক্ষার্থীর মধ্যে আগামী দিনের শিক্ষক, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার রাষ্ট্রনেতা প্রভৃতি মহীরূহের বীজ বপন করে যান। তবে শিক্ষক যে শুধুমাত্র একাডেমিক ক্ষেত্রেই হবেন, তা কিন্তু নয়। তিনি হতে পারেন জীবনের যে কোন ক্ষেত্রের শিক্ষক। শিক্ষক তিনি, যিনি জীবনকে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে সঠিক পথের সন্ধান দেন। ব্যর্থতার দিনে পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেন। সাফল্যের দিনে নতুন নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেন। সর্বোপরি শুধুমাত্র সফল মানুষ নয়, একজন ভালো মানুষ হয়ে উঠতে যিনি আমাদেরকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন। বলা হয়ে থাকে-
‘A great teacher is like a Candle. Its Consumes it self, to light the way for others’.
অর্থাৎ একজন শিক্ষক দীপকের মতো, যিনি নিজেকে ধীরে ধীরে নিঃশেষিত করে অন্যের চলার পথকে আলোকিত করেন। তা সমাজের একজন শিক্ষকের এই বহুমাত্রিক অনন্য সাধারণ ভূমিকার কথা সমাজের বিভিন্ন স্তরে স্মরণ করার জন্যই হয়তো লেখক এই পুস্তকটি লিখেছেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই শিক্ষকের তাৎপর্য অনেক। আর তা বলে শেষ করা যায় না। একজন শিক্ষকই পারেন তার ছাত্রের মধ্যে আমৃত্যু অবদি চিন্তার বাস্তব রূপ প্রতিফলিত করতে। কারণ সমাজের তিনি যথার্থ মানুষ গড়ার কারিগর। এই চির সত্যকে, এই Universal truth কে মান্যতা প্রদান করার জন্যই হয়তো ” দীপান্বিত গুরুকুল” লেখার প্রয়াস। তবে পাশাপাশি এটিও বলতে হয় যে, একজন শিক্ষক সমাজের মধ্যে থেকে যে মহান ব্রত ও দায়িত্ব পালন করেন তার জন্য যে সামাজিক সম্মান তার প্রাপ্য সেই সামাজিক সম্মান তাকে নত মস্তকে জ্ঞাপন করতে হবে। আমাদের যে, সামাজিক অবক্ষয় চলছে, ভালো শিক্ষকে খরা চলছে, শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা দুঃখজনক। অপর দিকে যখন দেখি একজন শিক্ষককে তার ছাত্রের সামনে অভিভাবক লাঞ্ছিত করে তখন খুব হতাশ হই। বিজ্ঞান শিক্ষক বিজ্ঞানের সত্যকথাটি শ্রেণী কক্ষে বলতে পারেন না, অথবা ছাত্রের ব্যাটের আঘাতে শিক্ষকের মৃত্যু ঘটে তখন ব্যথিত হই। ইদানীং শিক্ষক নির্যাতন সংক্রামক ব্যাধির ন্যায্য ছড়িয়ে যাচ্ছে দ্রুততার সাথে। আবার পরীক্ষার হলে যখন কোন শিক্ষক ছাত্রকে নিরুৎসাহিত না করে নিজে অসাধু পন্থা অবলম্বনের সহায়ক হয়, তখন হতাশ হই।

এ কথাগুলো সবাইকে স্মরণ রাখাও আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিক্ষার ক্ষেত্রে কত যে অনিয়ম অনাচার চলছে তা বলে শেষ করার মতো নয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও অন্যায় চলছে, অনিয়ম চলছে। চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করতে আট বছরও লেগে যায়। ভাল ছাত্র যথাযথ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হওয়া কোন ছাত্রকে যদি ক্রমাগত অকৃতকার্য দেখানো হয় তা হলে শিক্ষকের ভূমিকা কি? আমার ধারণা, এটা একান্তই অর্থ কামানোর প্রচেষ্টা। এ সব নিয়ে চিন্তা করলে মনে হয় আমরা আলোকিত হচ্ছিনা, বরং “আলো হাতে চলিয়াছি আঁধারের রাত্রি”। জাপানে একটি সুন্দর কথা প্রচলিত আছে। কথাটি হলো “Better than a thousand days of delligient study, is one with a great teacher”. অর্থাৎ হাজার দিন কঠোর অধ্যয়নের চাইতে একদিন মহান কোন শিক্ষকের সান্নিধ্যে থাকা অনেক ভালো। বইটির প্রচ্ছদ পরিকল্পনা প্রশংসনীয়। কালো এবং সাদা বর্ণের দোয়াত ও পালকের কলম ব্যবহার করা হয়েছে। পরিষ্কার স্বচ্ছ ছাপায় মুদ্রিত ও উন্নত মানের কাগজে (অফসেট) বইটি ঢাকার বলাকা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত। এই মূল্যবান বইটিতে ব্যবহৃত দুর্লভ ছবিগুলো যুগের চাহিদার সাথে মিল রেখে রঙিন কালারে করা গেলে আরও আকর্ষণীয় হতো। সুন্দর ঝকঝকে ছাপায় সহজ সরল উপস্থাপনে শিক্ষা গুরুর প্রতি হৃদয় নিংড়ানো অতলস্পর্শী শ্রদ্ধায়পূর্ণ এই বইটি সংরক্ষণ করার মতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজনসভায় পাঁচ লাখ লোক সমাগমের আশা
পরবর্তী নিবন্ধশিশুর চোখের কিছু সচরাচর অসুখ