গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, গুম সংক্রান্ত কমিশনে এক হাজার ৬শর বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১৪০ জনের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। খবর বাসসের।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আসামিদের কীভাবে গ্রেপ্তার করবে তার বিস্তারিত দিকনির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেটা অনুসরণ করা হয়নি। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নেওয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আইনের তোয়াক্কা না করে আটকে রাখা হতো। রাজনৈতিক কারণেই বেশিরভাগ ব্যক্তিদের গুম করা হয়েছে জানিয়ে কমিশন সভাপতি বলেন, তবে রাজনৈতিক কারণ ছাড়া স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগের বাইরেও অনেককে গুম করা হয়। গুমের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতজন সদস্য সংশ্লিষ্ট এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেই সংখ্যাটা এখনো বলা যাবে না। ৭ তারিখ থেকে বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। আমরা সমন ইস্যু করে দিয়েছি। প্রথম দিন সাতজনকে ডাকা হয়েছে। তারপর তিনজন, সাতজন, পাঁচজন এভাবে চলতে থাকবে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ডিজিএফআইয়ের সদস্য রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ডিজিএফআই, র্যাব, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি ও পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৬শর বেশি গুম হওয়া মানুষকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান তিনি। কমিশন সভাপতি বলেন, আমরা স্বাধীন হয়েছি ৫৩ বছর হলো। কিন্তু দেশে সুশাসন এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের এই কমিশন গঠন করে সরকার। ২৭ আগস্ট কমিশন গঠন করা হয়।
কমিশন গঠন সম্পর্কে গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার (পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সিআইডি, বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্টগার্ড) কোনো সদস্য দ্বারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে সরকার এই কমিশন গঠন করে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুমের ঘটনায় ভুক্তভোগী নিজে অথবা পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়স্বজন বা গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যেকোনো ব্যক্তি অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। সশরীর কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে, ডাকের মাধ্যমে অথবা কমিশনের ই–মেইলে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন। সে অনুযায়ী অভিযোগ দাখিল করেন ভিকটিম ও তাদের স্বজনরা।