গুমাইবিলে উন্মুক্ত বিচরণ করছে সহস্রাধিক মহিষ, হচ্ছে বেচাকেনা

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | শনিবার , ৩১ মে, ২০২৫ at ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিল শুধু ধান উৎপাদনের জন্যই নয়, পরিচিতি লাভ করেছে মহিষের বিচরণক্ষেত্র হিসেবেও। এই বিল কেন্দ্রীক অর্ধ শতাধিক ব্যবসায়ীর রয়েছে সহস্রাধিক মহিষ। যেগুলো আমন ও বোরো ধান কাটা হয়ে গেলে বিলে উন্মুক্তভাবে বিচরণ করে। বিলেই দিনরাত কাটে মহিষের পালগুলোর। সারাবছর ধরেই বিভিন্ন ওরশ, সভা, সামাজিক অনুষ্ঠানে পুরো চট্টগ্রাম থেকেই ক্রেতারা আসেন এই বিলের মহিষ কেনার জন্য। এমনকি কোরবান ঘিরে রাঙ্গুনিয়ার ব্রহ্মোত্তর রাস্তারমাথা এলাকায় চট্টগ্রামের বৃহত্তর মহিষের হাট বসে এই বিলের মহিষ দিয়েই।

জানা যায়, চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল একসময় ঝিল ছিল। সেখানে পাওয়া যেত প্রচুর মাছ। ১৯৪৫ সালে এই বিল সংস্কার করে আধুনিক চাষাবাদ শুরু করলে এখন পর্যন্ত দুই ফসলী জমি হিসেবে বছরে এই বিল থেকে কোটি টাকার উপরে ধান উৎপাদিত হয়। তবে এবার গুমাই বিলের আরেকটি পরিচয় মিলেছে। সেখানে বিচরণ করতে দেখা যাচ্ছে হাজারো মহিষের পাল। আপন মনে বিলের সবুজ ঘাস খেয়ে পেট ভরাচ্ছে মহিষগুলো। বিলের পাশে গাছের ছায়ায় বসে সেগুলোকে পাহারা দিচ্ছে রাখালরা। বিলের স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়ার ব্রহ্মোত্তর অংশে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া চন্দ্রঘোনা ও হোসনাবাদ অংশেও একইভাবে বিলে বিচরণ করতে দেখা গেছে শত শত মহিষের পাল।

গুমাইবিলের মহিষ ব্যবসায়ীরা জানান, আগে মহিষ দিয়ে কোরবানি করার প্রবণতা কম থাকলেও এখন নানা রোগবালাইয়ের কথা চিন্তা করে ইদানিং মানুষ মহিষ দিয়েই অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোরবানি দিচ্ছেন। একই ওজনের মহিষের দাম গরুর চেয়ে অন্তত ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা কম। কোরবান উপলক্ষে এক বছর আগে থেকেই বরিশাল, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মহিষ এনে তা লালন পালন করে বিক্রি করা হয়।

কথা হয় আবু বক্কর নামে একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাবছরই গুমাইবিলে মহিষ থাকে। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সারাবছর গুমাইবিলে মহিষ রেখে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন ওরশ, সভা, সামাজিক অনুষ্ঠানে বিল থেকেই মহিষ কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা। কোরবানি উপলক্ষে ভিন্ন আয়োজন থাকে এই বিলের মহিষ বেপারিদের। কয়েক মাস আগে থেকেই মহিষ সংগ্রহ করে লালনুপালন করে কোরবানে বিক্রি করে থাকেন। এরকম কোরবান উপলক্ষে শুধুমাত্র গুমাইবিলের ব্রহ্মোত্তর এলাকায় পাঁচ শতাধিক মহিষ এনেছেন বিক্রেতারা।

তিনি আরও জানান, গুমাইবিল কেন্দ্রিক তার একটি মহিষের খামার রয়েছে। যেখানে ১৩০টি মহিষ রয়েছে। এরমধ্যে কোরবান উপলক্ষে ৭৫টি মহিষ বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫টি মহিষ বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

মো. সালাউদ্দিন নামে অপর এক ব্যবসায়ী জানান, তারও গুমাইবিলের ধারে মহিষের খামার রয়েছে। আমন ও বোরো মৌসুমে ধান কাটা হয়ে গেলে বিলে মহিষগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয়। এগুলো তখন উন্মুক্ত অবস্থায় বিলে বিচরণ করে। বিল থেকেই হয় বেচেকেনা। যখন বিলে ধান থাকে তখন খামারে রেখে প্রাকৃতিক ঘাষ উৎপাদন করে মহিষগুলোকে খাওয়ানো হয়। স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের শান্তি নিকতেনের মহিষ বিক্রেতা আব্দুল জলিল জানান, একটি তিন মন ওজনের মহিষের দাম মিনিমাম ৯০ু৯৫ হাজার টাকা। তবে এর চাইতে বড় মহিষ কিনলে মন প্রতি ৩০ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।

মহিষ বিক্রেতা কুতুবুল আলম, মো. ইসমাঈল জানান, গুমাইবিলে সর্বনিম্ন ৩ মন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯১০ মন ওজনের মহিষ রয়েছে।দূরুদূরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে মহিষ কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া কোরবানি উপলক্ষে শনিবার (৩১ মে) থেকে ব্রহ্মোত্তর রাস্তারমাথা এলাকায় একটি মহিষের বাজার বসবে। যেটি উপজেলার একমাত্র মহিষের বাজার এবং চট্টগ্রামের বৃহত্তর বাজার। যেখানে শুধু গুমাইবিলের এই মহিষগুলোই বিক্রি হয়।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শরমিন আক্তার জানান, এবার কোরবানির জন্য রাঙ্গুনিয়ায় ৪৮ হাজার পশু প্রস্তুত রয়েছে। কোরবানে মহিষের চাহিদা ব্যাপক৷ গুমাইবিল কেন্দ্রিক মহিষের খামার রয়েছে, ধান উঠে গেলে উন্মুক্ত অবস্থায় মহিষ লালন পালন করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যবসায়ীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডলু-হাতিয়া-হাঙর খালে ভাঙন লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি
পরবর্তী নিবন্ধ‘শহীদ জিয়া ছিলেন একজন সৎ কর্মঠ ও দেশপ্রেমিক নেতা’