গুমবিরোধী সনদে বাংলাদেশের স্বাক্ষর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসাযোগ্য কাজ

| সোমবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন অভাবনীয় একটি কর্ম সম্পাদন করেছে। সরকার জাতিসংঘের গুম ও নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ, যা ছিল বহুল প্রত্যাশিত। দেশের মানুষকে গুম হওয়া থেকে রক্ষা করতে ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সনদে স্বাক্ষর করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন উদ্যোগ অভিনন্দনযোগ্যই শুধু নয়, গুমের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান যে দৃঢ়, তাও প্রতীয়মান হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ‘বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্তকাজ সম্পন্ন করে কমিশনকে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এতে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। জাতিসংঘের গুম ও নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি ২০০৬ সালে গঠিত হলেও বাংলাদেশ কেন এতদিন এতে স্বাক্ষর করেনি, সে প্রশ্নের জবাব দেরিতে হলেও আমরা পেয়েছি। বিগত সরকারের পতনের পর সমপ্রতি আয়নাঘরসহ গুমখুনের নানা তথ্য বেরিয়ে আসায় এটা স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রীয় ইন্ধনে এ ধরনের অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, তারা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করত না। এককথায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দায়িত্বের বিপরীতে ব্যবহার করা হয়েছে।’

এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক গুমের হাত থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। গত ৩০ আগস্ট শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বলপূর্বক গুমের ইস্যুটি নিয়ে বাংলাদেশের একটি দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক ইতিহাস রয়েছে। এ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর ও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বার বার কথা বলে আসছে। শামদাসানি বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন।’

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনকে এর কাজে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছি, যা ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ আলোচনাপরামর্শ এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে নির্দেশনামূলক নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’ শামদাসানি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবন, জবাবদিহিতা ও পুনর্মিলন এবং বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য মানবাধিকারকে এগিয়ে নিতে এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণকে সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘একটা স্বাধীন দেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে স্বাধীনতার জন্য। সে দেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে গুম নিয়ে কথা বলতে হয়। তার মতো দুঃখের আর কী হতে পারে। আর যেন গুম নিয়ে কথা বলতে না হয়, এ কারণে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করেছে। গুমের কোনো ন্যায্যতা অন্যায্যতা নেই। প্রথম থেকেই এটা অন্যায্য বিষয়।’ তাঁরা বলেন, গুম হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে যেন সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব না হয়, সেবিষয়ে সরকারের প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা থাকতে হবে। অন্তত যারা গুমের বিষয়ে জড়িত ছিলেন, তাদের যেন বিচারের মুখোমুখি করা যায়, এটুকু আশা করা তো একটা সভ্যদেশে বেশি আশা করা না। আর যেন কোনো সরকার তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে আয়নাঘর সৃষ্টি করতে না পারে, সেব্যাপারে সর্বাত্মক সতর্ক থাকতে হবে। তাঁরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধেরও দাবি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে