বছর কয়েক ধরে পর্দার আড়ালে থাকার পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে আসার পরিকল্পনা করেছিল। লকডাউনে আর্থিক সংকটে পড়া গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষকে সহায়তার নামে তাদের উসকানি দিয়ে এবং মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ করে দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা ছিল জামায়াত-শিবিরের।
নগরীতে গোপন বৈঠক থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ তাদের এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুতি বৈঠকের এক পর্যায়ে চান্দগাঁওয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ওই ১৯ নেতাকর্মী। গতকাল তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেশ বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি।
সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) আবু বক্কর সিদ্দিক আজাদীকে বলেন, অভিযানে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ১০-১২ জন পালিয়ে গেছে। গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আমরা প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছি, লকডাউন বানচালের একটা কর্মসূচি তারা সাংগঠনিকভাবে নিয়েছিল। জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার ফাঁসি দেওয়া ও দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীসহ অন্যান্য নেতাকে জেলে আটক রাখার প্রতিবাদে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা সংঘটনের উদ্দেশ্যে তারা বৈঠকে বসেছিল। তবে আমরা তাদের এই চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছি।
ঘটনাস্থল থেকে গোলাম আযম, সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী ও জামায়াত-শিবির প্রকাশিত কয়েকটি বই এবং চাঁদা আদায়ের রসিদ পাওয়া গেছে।
গত সোমবার রাতে চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া বানিয়ারপুল মাজার গেটে একটি ভবনের তৃতীয় তলা থেকে গ্রেপ্তার জামায়াত-শিবিরের ১৯ নেতাকর্মী হলেন, স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. ইসহাক (৭৫), জামায়াতের চান্দগাঁও (উত্তর) ইউনিটের সহকারী বায়তুল মাল সম্পাদক মো. ইসকান্দর (৩৩), একই ইউনিটের সভাপতি আবুল হাসান মো. ইয়াসিন (৪২) ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম (৩৫), অদুরপাড়া ইউনিটের বায়তুল মাল সম্পাদক আবু হোসেন এরশাদ (৩৬), জামায়াতকর্মী মুজিবুল হক জাবেদ (৩২), মোর্শেদুল আলম (৩২), শওকত হোসেন (৪০), শহিদুল ইসলাম বেলাল (৩৫), আনোয়ার খালেদ (৪০), সাইফুল ইসলাম (৩৮), ফরহাদুল ইসলাম (৩৩), জকির হোসেন (৪৮) ও শেখ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (৫২), শিবিরকর্মী মো. মিরাজ (১৯), আলী আজগর (২৯), আবুল কাশেম (২৭), আবু সালেহ মো. রিফাত (১৮) ও আবু বক্কর ছিদ্দিক মমিন (২৩)।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যে বাসায় বসে গোপন বৈঠক করা হচ্ছিল সেটি স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. ইসহাকের। তাকে ও তার ছেলে জামায়াত নেতা ইসকান্দরকে ওই বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় মসজিদের ইমামের বাসা হওয়ায় কেউ সন্দেহ করবে না, এমন চিন্তা থেকে সেখানে বৈঠক করা হচ্ছিল।