গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে চারবার

ফুটবল ফ্রি-স্টাইলে চট্টগ্রামের জোহান

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

ফুটবল ফ্রি-স্টাইল। সাধারণত যে ফুটবল খেলা, এটি ঠিক তা নয়। তবে ফুটবল নিয়েই নানা ধরনের কসরত। এটা এক ধরনের আর্ট। ফুটবল নিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি। মূল কথা, বলকে নিয়ন্ত্রণের এক আলাদা দক্ষতাই ফুটবল ফ্রি-স্টাইল। আর এই ফুটবল ফ্রি-স্টাইলেই দারুণ দক্ষ চট্টগ্রামেরই সন্তান আশরাফুল ইসলাম জোহান। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও সুনাম অর্জন করে চলছে সে। ইতোমধ্যে তার ঝুলিতে জমা পড়েছে চার চারটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সনদ। জোহানের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। তবে জন্ম থেকেই পরিবারের সাথে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকে নিজেদের বাসায় বসবাস তার। এক ভাই এক বোনের মধ্যে বড় জোহান। তার বাবা যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শহীদুল ইসলাম ঢাকায় কর্মরত। মা গৃহিণী সাদাত আফজা। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির মার্কেটিং বিভাগের ৭ম সেমিস্টারে পড়ছে সে। পড়াশোনার সূত্রে ঢাকাতেই বেশি থাকা হয় জোহানের। তবে করোনাকালে এখন চট্টগ্রামেই অবস্থান করছে।
জোহান জানায়, ফুটবল ফ্রি-স্টাইল একটা নিজস্ব সৃজনশীলতা। এখানে তিনটি স্টাইল। একটা হলো আপারস্‌ (মাথা দিয়ে), দ্বিতীয় লোয়ারস্‌ (পা দিয়ে) এবং তৃতীয়টি সিট ডাউন (বসে বসে) ফুটবল নিয়ে কসরত। কেউ কেউ একটি/দুটি আবার কেউ সবগুলোই করতে পারেন। জোহান কিন্তু ৩টিতেই দক্ষ। তাই তাকে এই ইভেন্টের অলরাউন্ডারও বলা যায়।
ফুটবল ফ্রি-স্টাইলে জোহানের শুরুটা ২০১৬ সাল থেকে। এসএসসি পাস করার পর থেকে এর সাথে জোরেশোরে সম্পৃক্ত হতে থাকে। এর আগে স্কুল পর্যায়ে ক্লাস ফোর থেকে প্রচুর ফুটবল খেলছে সে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবে দু’সপ্তাহের সফরে একটি দল যায়। সে দলের বাছাইয়ে পুরো বাংলাদেশ থেকে নেওয়া প্রথম ২০০ জনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল জোহান। যদিও পরে ১২-১৩ জনের মূল দলে জায়গা হয়নি তার। কিন্তু তিনি বিকেএসপিতে ট্রেনিং পেয়েছিল। বাংলাদেশে ফুটবল ফ্রি-স্টাইল বিষয়ে জাতীয়ভাবে কোনো টুর্নামেন্ট বা প্রতিযোগিতা না হলেও ঢাকায় ২০১৭ সালে একটি ফুটবল ফ্রি-স্টাইল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জোহান দ্বিতীয় রানার্স আপ হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালে নটরডেম কলেজ আয়োজিত একটি টুর্নামেন্টে ১ম স্থান অধিকার করে জোহান। এরপর বিভিন্ন স্কুল, সংস্থা, কোম্পানির প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে আসছে সে। সাধারণত জনসমাবেশ, বিনোদন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার আমন্ত্রণ পায় জোহান। সম্প্রতি ঢাকায় অবস্থিত কানাডীয় ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পারফর্ম করেছে সে। জোহান তার চারটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড প্রসঙ্গে দৈনিক আজাদীতে জানায়, ২০১৮ সালের ২২ মে প্রথম সনদটি পায় সাইড হেড স্টল বল কন্ট্রোল ট্রিকসের মাধ্যমে। এক মিনিটে ১০৪ বার করে এটি। তবে তার এই রেকর্ডটি এখন ভেঙে গেছে। ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি একই ইভেন্টে ৩০ সেকেন্ডে ৬৬ বার নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা দেখায় জোহান। তার এই বিশ্ব রেকর্ডটি এখনো অক্ষুণ্ন আছে।
২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর নেক থ্রো এন্ড ব্যালেন্সে ৩০ সেকেন্ডে ২৬ বার বল নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে জোহান। এই রেকর্ডটিও এখন আর তার কাছে নেই। ভেঙে গেছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর মোস্ট ফুটবল ক্রসওভারে ১ মিনিটে ৪৬ বার নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা দেখিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। তার এই রেকর্ডটি এখনো অক্ষত আছে। আগের রেকর্ডটি ছিল এক ইতালিয়ানের। ২০১৮ সালে আশরাফুল ইসলাম জোহান থাইল্যান্ড গিয়েছিল। সেখানে ট্রেনিং করে এবং ফুটবল ফ্রি-স্টাইল নিয়ে আলোচনা হয় তার সাথে। জোহান জানায়, বেভারেজ কোম্পানি রেড বুল বিভিন্ন দেশে ফুটবল ফ্রি-স্টাইল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। তবে এটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়াতে সেসব টুর্নামেন্টে তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জোহানের স্বপ্ন ওয়ার্ল্ড ফুটবল ফ্রি-স্টাইল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়া। চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে এটি অনুষ্ঠিত হয়। সুপার বল প্রতিযোগিতা নামে পরিচিত এটি। নিজস্ব খরচে সেখানে যাওয়া যায়। তবে জোহানের ভাষায় স্পন্সর কোম্পানি না থাকায় বাংলাদেশের ফ্রি-স্টাইলারদের সুযোগ মিলছে না। তাই তার পক্ষে আপতত সেখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে জোহান আশাবাদী একসময় সেখানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে সমর্থ হবে সে। জোহানের বিশ্বাস, ইভেন্টটির পরিসর হয়তো এখন ছোট। তবে একসময় তা অনেক বৃদ্ধি পাবে। বাবার উৎসাহ আর মায়ের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে এই রেকর্ডধারী ফ্রি-স্টাইলার। সে জানায়, ফুটবল ফ্রি-স্টাইল করতে গিয়ে বাবাই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে দেন।
চট্টগ্রামের জন্য কিছু করার আগ্রহ প্রকাশ করে জোহান জানায়, তাকে দেখে চট্টগ্রামের অনেকেই ফুটবল ফ্রি-স্টাইলে ঝুঁকছে। তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে। কেউ যদি তার কাছ থেকে শিখতে চায় তাও সে সহযোগিতা করবে। জোহান জানায়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রোল মডেল হতে চাই সে। তাকে দেখে ছোটরা যেন এগিয়ে আসে। সেটা শুধু যে ফুটবল ফ্রি-স্টাইল হতে হবে তা নয়, অন্য যে কোনো বিষয়ে তারা এগিয়ে যেতে পারে। অধ্যবসায়ী হতে পারে। চট্টগ্রাম-ঢাকা যেখানেই থাকুক না কেন প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা অনুশীলন করেন জোহান। ঘরেই অনুশীলনের ব্যবস্থা আছে তার। বিশ্বসেরা ফুটবল ফ্রি-স্টাইলার হয়ে বাংলাদেশকে আরো উঁচুতে তুলে ধরাই তার স্বপ্ন বলে জানায় জোহান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে দৈনিক শনাক্তের হার ৫.৮৯ শতাংশ
পরবর্তী নিবন্ধআল জাজিরার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার কথা ভাবছে সরকার