মালিকের নির্দেশেই চালক পিষে মারে চান্দগাঁও থানা পুলিশের এএসআই কাজী মো. সালাহউদ্দিনকে। এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের স্বীকারোক্তিতে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। গত শুক্রবার রাতে কক্সবাজারে পালানোর পথে মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মাইক্রোবাসের চালক মো. বেলাল (৩৪), মো. রাশেদ (২৬) এবং তার বাবা সামশুল আলম (৬০)।
এদের মধ্যে মাইক্রোবাসের চালক উত্তম বিশ্বাস ধর্মান্তরিত হয়ে বেলাল নাম ধারণ করেন। তার বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার ধোরলা গ্রামে। সামশুল মাইক্রোবাসের মালিক মো. জাহাঙ্গীরের বাবা এবং রাশেদ ছোট ভাই। তাদের বাড়ি একই উপজেলার আহল্লা দরবার শরীফ এলাকায়। জাহাঙ্গীরের মোটর সাইকেলটি নগরীর একটি গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
হত্যা মামলায় চালক বেলাল চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া মাদক মামলায় বেলালসহ তিন জনকে একই আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গত ১১ জুন সকালে চান্দগাঁও থানার মেহেরাজখান ঘাটা পেট্রোল পাম্পের সামনে বোয়ালখালী-পটিয়া অভিমুখী মাইক্রোবাসটিকে থামার সংকেত দিয়েছিলেন এএসআই কাজী মো. সালাহউদ্দিন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি সেই সংকেত অমান্য করে চলন্ত অবস্থায় তাকে ধাক্কা দেয় এবং টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় সামনে। গুরুতর আহত এএসআই সালাহউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চান্দগাঁও থানার মেহেরাজখান ঘাটা এশিয়া ফ্যান ইন্ডাাস্ট্রিজ লিমিটেডের গেটের সামনে রাস্তার ওপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে। গাড়িটির ভেতর ৭৩০ লিটার মদ পাওয়া যায়। পুলিশ হত্যাকান্ড ও মদ উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক মামলা দায়ের করে।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেশ বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, চোলাই মদবাহী মাইক্রোবাসটিকে আগে-পিছে এস্কর্ট দিচ্ছিল দুটি মোটর সাইকেল। এর মধ্যে সামনের মোটর সাইকেলে ছিলেন মাইক্রোবাসের মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ম্যানেজার বাবু। পেছনের মোটর সাইকেলে ছিলেন জাহাঙ্গীরের পার্টনার রাশেদ ও ফারুক। চালক বেলাল জাহাঙ্গীরের সংকেত অনুসরণ করছিলেন।
তিনি বলেন, সাধারণত কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আশপাশের সড়কে অর্থাৎ শহরের প্রবেশ মুখে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির চেকপোস্টে নিয়মিত যানবাহন তল্লাশি করা হয়। তাদের ধারণা ছিল, কাপ্তাই রাস্তার মাথায় তারা অবশ্যই চেকপোস্টে তল্লাশির মুখে পড়বেন। এজন্য চালকের প্রতি জাহাঙ্গীরের নির্দেশনা ছিল, পুলিশ থামার সংকেত দেওয়ার পরও সে যেন গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যায়। এতে প্রয়োজনে কোনো পুলিশ সদস্য হতাহত বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও চালক গাড়ি থামাতে পারবে না। ধরা পড়ে কোনো মামলা হলেও সেটা সামলাতে হবে চালককে।
এএসআই সালাহউদ্দিন গাড়ি থামার সংকেত দিলে সামনের মোটর সাইকেলে থাকা জাহাঙ্গীরের সংকেত মেনেই চালক বেলাল তাকে পিষে দেন। কিন্ত পিষে দেওয়ার পর সামনের মোটর সাইকেল নিয়ে জাহাঙ্গীর দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় বেলাল রাস্তায় মাইক্রোবাস ফেলে পালিয়ে যান।