গায়ে হলুদের আগে তরুণীর আত্মহত্যা, থানায় মামলা

পটিয়া প্রতিনিধি

| শনিবার , ২৯ জুন, ২০২৪ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ায় ‘যৌতুকের বলী’ কলেজ ছাত্রী রীমা আক্তারের (২০) আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় রীমার পিতা মনির আহমদ বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে হবু স্বামী মোরশেদুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে পটিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মিজান মোরশেদ উপজেলার হাইদগাঁও ইউপির মফিজুর রহমানের পুত্র ও নারায়ণগঞ্জে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকে জুনিয়র ক্যাশ অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অন্যদিকে নিহত রীমা পটিয়া সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

পটিয়া থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মেহেদী অনুষ্ঠানের দিন কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে পটিয়া থানায় আত্মহত্যা প্ররোচণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে এখনই মামলার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গতকাল দিনভর চলছে প্রতিবাদের ঝড়। যৌতুক লোভী হবু স্বামী ব্যাংকার মোরশেদুর রহমান মিজানের কঠোর শাস্তি দাবি করেন অনেকে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার হাইদগাঁও ইউপির তালুকদার বাড়ির মনির আহমদ প্রকাশ বাচা মিয়ার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রীমা আকতার মেহেদী অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা পূর্বে হবু স্বামীর যৌতুকের চাপে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

জানা যায়, নিহত রীমা ও মিজানের মধ্যে চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুই বছর পূর্বে তাদের কাবিননামা হয়। প্রেমের সম্পর্কের কারণে তাদের মধ্যে কথা হয়কোনো যৌতুক ছাড়াই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হবে। কিন্তু বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হওয়ার পর থেকে মিজান বিভিন্নভাবে রীমা ও তার পরিবারকে যৌতুকের জন্য মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মেহেদী অনুষ্ঠানের দিন হবু স্বামী মিজান রীমা কে ফোন করে ফার্নিচারের জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। এর আগে বরযাত্রী বাবদ রীমার পরিবার মিজানকে ২ লাখ টাকা প্রদান করেন। গায়ে হলুদের দিন ফার্নিচার দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি ফার্নিচার না দিলে ঢাকা থেকে না ফেরার ঘোষণাও দেন মিজান! এতেই আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয় রীমা।

রীমার মৃত্যুর পর তার ডায়েরিতে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। তাতে লেখা-‘প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে। অনেক ভালোও বেসেছো এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছো। আমি পারছি না এত যন্ত্রণা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করতে পারলাম না। ভালো থেকো। আজকের দিনে ও তোমার যন্ত্রণা আমি নিতে পারছি না, আমার পরিবার থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদের দিয়েছে ওগুলো শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না। আমি বাঁচতে পারতাম যদি আমি বেশি মানসম্মান ওয়ালা পরিবারে জন্মগ্রহণ না করতাম, সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও, আর আমার পোস্টমর্টেম করিয়ে আমার সব যন্ত্রণা দুয়ে মুছে আমাকে কবরে পাঠিয়ো। ইতি তোমাদের আদরের

আর আমার পরিবারকে বলছি মোরশেদকে তোমরা ছাড়বা না। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি দিবা। এদিকে গতকাল শুক্রবার তার মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আনার পর বাদে মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিদেল কাস্ত্রো নারীবাদী হিসেবেও এক অনন্য নাম
পরবর্তী নিবন্ধমাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সমুদ্র সৈকত মহেশখালীর পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা